আমি একজন হোমিওপ্যাথ, ডাক্তার নই

প্রফেসর (অবঃ) পরেশ চন্দ্র মোদক

ডাক্তার শব্দটির সঙ্গে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। কিন্তু এই শব্দটির উৎপত্তি কীভাবে আমরা অনেকেই তা জানি না। সাধারণতঃ আমরা ডাক্তার বলতেই চিকিৎসকদের বুঝি, যারা রোগীর চিকিৎসা করেন। কিন্তু চিকিৎসক ডাক্তার হলো কীভাবে? উল্লেখ্য, অ্যাকাডেমিক বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ডক্টরেট-এর সঙ্গে ডাক্তারের কোন সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে ডাক্তার একটি সম্বোধনাক্তক শব্দ। চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি নির্দিষ্ট কোর্স অধ্যয়ন করলেও কেউ নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিতে পারবেন না, যতক্ষণ না সে একটি অ্যাসোসিয়েশন বা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ ডাক্তার একটা পরিচিতি শব্দ যার মাধ্যমে কাউকে সম্বোধন করা হয়।

বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্যে এবং হোমিওপ্যাথির সঙ্গে এর সঙ্গতি-অসঙ্গতি কোথায় তা নিরূপনের জন্যে নিম্নোক্ত তথ্যাদির উল্লেখ প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬২ সনের আগে পশু-পাখির চিকিৎসা কেন্দ্র ছিল। সঙ্গতঃ কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের মধ্যে ভেটেরিনারি মেডিসিনকে প্রথমে রাখা হয়। তারপরে কৃষি অনুষদ। পশু-পাখির চিকিৎসা অর্থাৎ ভেটেরিনারি অনুষদের একটি রাজকীয় ভাব ছিল। বিষয়টি আমি বুঝতে পেরেছিলাম ১৯৮০ সনে সেই অনুষদের ডিন প্রফেসর রাব্বি চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে। তখন আমি কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক ছিলাম। সব অনুষদের সিলেবাসে পরিসংখ্যান থাকলেও ভেটেরিনারিতে ছিল না। বিষয়টি নিয়ে আমার বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আশরাফ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁরা এখনো মানসিকভাবে পরিসংখ্যানকে গ্রহণ করতে পারেনি। আমি চেষ্টা করতে পারি কিনা বলতেই স্যার বলেছিলেন, তুমি ডিনের সঙ্গে কথা বলতে পারো। আমি গিয়েছিলাম; কিন্তু ডিন মহোদয় বললেন, আমরা রয়েল ফ্যাকাল্টির লোক। আমাদের পরিসংখ্যানের দরকার নেই। তাঁর কথায় আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। বলেছিলাম, আপনি না হলেও পরবর্তীতে কেউ না কেউ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করবেন।

কিছুদিন পরেই একটি মজার ব্যাপার ঘটে গেলো। ভেটেরিনারি অনুষদের মাষ্টার্সের একজন ছাত্র মি. শফিক তাঁর গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে পরিসংখ্যানের প্রয়োজন অনুভব করে। গবেষণাটি ছিল ডিমের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তারের গতি-প্রকৃতি দেখা। লিটারেচার রিভিউ করতে গিয়ে সে দেখতে পায়, একই ধরনের গবেষণায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার করে খুবই উন্নতমানের গবেষণাপত্র তৈরি করেছে উন্নত বিশ্বের একজন গবেষক। শফিক গবেষণাপত্রটি ভাসা-ভাসা বুঝে কিন্তু ধরতে পারছে না এর রহস্য কোথায়। সে আমার কাছে এসে বলে, আমি একই ধরণের গবেষণা করেছি কিন্তু আমার গবেষণার সিদ্ধান্ত কোনভাবেই সেই গবেষকের মতো করতে পারছি না। বলেছিলাম, তুমি তো এসব বুঝতে পারবে না। ভেরিয়েবল কী, সে সম্বন্ধেই তোমার ধারণা নেই। প্রবাবিলিটি, প্রবাবিলিটি ডিষ্ট্রিবিউশন, নরমাল ডিষ্ট্রিবিউশন, রিগ্রেশন, প্রবিট না জেনে তুমি কীভাবে এলডি-৫০ বা এলডি-৯০ বের করবে? আর তা না জানলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কীভাবে?

কথা শুনে শফিক খুব হতাশ হয়ে গেল। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, ওর সুপাভাইজার প্রফেসর রাব্বি চৌধুরী। তখন ওকে নিয়ে গেলাম প্রফেসর রাব্বি চৌধুরীর কাছে। বলেছিলাম, আপনার সুপাভিশনে থেকে শফিক যে গবেষণা করেছে তা উন্নত মানের কিন্তু উপযুক্ত পরিসংখ্যানের অভাবে তা উন্নত মানের হতে পারছে না। এমতাবস্থায় সে কী করবে? তখন তিনি গবেষণাপত্রটি দেখলেন। বললেন, আমরা যেভাবে শিক্ষা দেই সেভাবেই করবে। কিন্তু শফিক তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

প্রফেসর রাব্বি ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব। তাঁর কথার বিরুদ্ধে যাওয়া ভেটেরিনারিতে তো নয়ই সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়েই কেউ ছিল না। কিন্তু শফিক চায় তাঁর থিসিস মানসম্পন্ন হোক। এমতাবস্থায় ডিন মহোদয়ের রুমে ঢুকেন প্রফেসর জলিল সরকার যিনি হবেন পরবর্তী ডিন। তিনি আমাদের আলোচনার ফাঁকে প্রশ্ন তুললেন, জীবাণুর বংশ বিস্তারের সঙ্গে পরিসংখ্যানের কী সম্পর্ক? জীবাণুর বংশ বিস্তার হয় বাইনারি ফিশনে। সেটা তো ম্যাথমেটিক্যাল বিষয়। বংশ বিস্তারের গতি কেন কম-বেশি হয় তারও উত্তর গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়। তবে, সে জানাটাই শেষ কথা নয়। জীবাণুর অর্থবহ নিয়ন্ত্রণের জন্যে সেটার পরিমানও জানতে হবে। এজন্যে পরিসংখ্যানের ব্যবহার অপরিহার্য। তাই এর বিকল্প নেই। বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলকে ব্যবহারিক দিকে মহিমাহ্নিত করে পরিসংখ্যান। একে বাদ দিয়ে পূর্ণতা অর্জন করা যায় না। আর সে কারেণেই এটা ইগোর বিষয় নয় বরং আবশ্যিক বিষয়।

যাহোক, তখন আমি জীবাণুর বংশ বিস্তারের পরিমান নির্ণয়ে লগ বেস-২ এর সঙ্গে পরিসংখ্যানের সম্পর্ক কীভাবে স্থাপিত হয় এবং তার গুরুত্ব নিয়ে কিছু বললে তিনি সন্তুষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শফিককে তুমি সাহায্য করো। প্রফেসর রাব্বি চৌধুরীও মৌন সম্মতি দিলেন। মনে হয়, সম্ভবত শফিকের থিসিসটিই গুণমানে তখন অনন্য হয়েছিল।

তার কিছুদিন পর প্রফেসর জলিল সরকার ডিন হলেন। আমাকে ডাকলেন ডিভিএম-এর ছাত্রদের জন্যে পরিসংখ্যানের একটি সিলেবাস তৈরি করতে। কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের মাধ্যমে ডিনের নিকট সিলেবাসটি পাঠিয়ে দিলাম। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে তা পাশ হলো। শুরু হলো ডিভিএম-এ পরিসংখ্যানের ক্লাশ। বেশ কয়েক বৎসর আমিই ক্লাশ নিয়েছি। পরিসংখ্যান প্রাথমিকভাবে একটি নিরস বিষয় বলে মনে হবে। কিন্তু এর রস কোথায়? ছাত্ররাই বা এ বিষয়ে উৎসাহ দেখাবে কেন? আমরা জানি, কোনো বিষয়ে কারো উৎসাহ না থাকলে বিষয়টিকে নিরস বলেই তার মনে হবে। তাতে সে বিষয়টি পড়তেও চাইবে না শিখতেও চাইবে না। ছাত্ররা শিখতে আসে, তারা জানতে চায়। এজন্যে তাদের মনে প্রশ্ন থাকতে হবে। যদি প্রশ্ন না থাকে, কেউ কোন কিছুই জানতে চাইবে না। তাতে পড়াশুনার উদ্দেশ্যই লক্ষ্যচ্যুত হবে। শুধু মুখস্ত করে তথাকথিত পন্ডিত হওয়া যেতে পারে, বাস্তবের নিরিখে তা কোনো কাজে আসে না। শিক্ষকের দায়িত্ব ছাত্রদের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে দেওয়া এবং সেই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর খুঁজতে তাদেরকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া। যেমন, কার্য-কারণ সম্পর্কিত বস্তুগত তথ্য বিশ্লেষণে গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্য যদি নির্ভুলও হয় তবুও কেন সে সব তথ্য থেকে বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না, তার ত্রুটি কোথায়, সমাধানের পদ্ধতি কী, ইত্যাদি প্রশ্ন স্বভাবতই ছাত্রদের মনে জেগে উঠবে। তাদেরকে এর উত্তর পেতে হবে। নূতবা গবেষণাগারের তথ্য সেখানেই পড়ে থাকবে, প্রায়োগিক দিকে আর এগুতে পারবে না। তখন বিফল হবে গবেষণার উদ্দেশ্য। কিন্তু তা কারো কাম্য নয়। এসব প্রশ্ন ছাত্রদের মনে জাগিয়ে তুলার পর গল্পের ছলে রোগ-জীবাণুর গতিধারা বা ওষুধের কার্যকারিতা নির্ণয়ে পরিসংখ্যানের ব্যবহার কীভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অপরিহার্য হয়ে উঠে সে বিষয়ে আলোকপাত করতাম। লক্ষ্য করেছি, তৎক্ষনাৎ ছাত্রদের মনে বিষয়টি জানার আগ্রহ বেড়ে যেতো। এভাবেই আমার ক্লাশ এগিয়ে যেতো, ছাত্ররাও তাতে বেরিং বোধ করতো না।

এইচএসসি পাশ করার পর ছাত্ররা ব্যাচেলর কোর্স করে। কিন্তু ডিভিএম-এর ছাত্ররা ব্যাচেলর কোর্স করেই ডাক্তার (ডাঃ) বা Doctor (Dr.) হয়। এরপর তারা মাষ্টার্স বা এম ফিল করে। তখনো তারা ডাক্তার থাকে। পিএচডি করলেও তারা তা-ই থাকে। বিষয়টি প্রশ্নবোধক হতেই পারে। কিন্তু কেউই এব্যাপারে প্রশ্ন তুলেননি যদিও এক্ষেত্রে ডাক্তার ও Doctor একাকার হয়ে গেছে। আসলে Doctor ও Doctor এক নয়। Doctor এর ব্যুৎপত্তি ১৩০০ শতকে। কোন বিষয়ে কেউ গভীর জ্ঞান অর্জন করলে একটি নির্বাচিত বোর্ড কত্তৃক তাকে এই উপাধি দেওয়া হতো। এটা ধর্ম যাজকদের মধ্যে প্রথমে প্রচলিত হয়। ধীরে ধীরে তা সকল বিষয়ে অনুপ্রবেশ করে। সাহিত্যে, ইতিহাসে, দর্শনে, সঙ্গিতে, আইনে, অর্থনীতিতে, বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রেই এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এটা একটা অর্জিত ডিগ্রি।

পিএইচডি, ডি.লিট, ডি.এসসি, ইত্যাদি ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যাক্তিগণ তাদের নামের পূর্বে ড. বা Dr. লিখেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও পিএইচডি, এমডি বা সমমানের ডিগ্রি থাকলে নামের পূর্বে ড. বা Dr. লিখেন। কিন্তু ডাক্তার (ডাঃ) এলো কী-ভাবে? যারা এমবিবিএস পাশ করেন তাঁরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাচেলর বা স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে অর্থাৎ ১৯০০ সনের শুরুর দিকে ব্রিটিশ চিকিৎসকদের Dr. অনুকরণে পাক-ভারত উপমহাদেশের চিকিৎসকরা Dr. লেখা শুরু করেন। ১৯৫০ সনের পর থেকে চিকিৎসকদের মধ্যে ডাক্তার লেখার প্রচলন বেড়ে যায়। দন্ত চিকিৎসকগণও তাঁদের নামের আগে ডাঃ লিখেন।

বিএমডিসি আইন ২০১০ এর ২৯ ধারা মোতাবেক নিবন্ধনভুক্ত এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ তাঁদের নামের পূর্বে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। এ সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পারেন না কারণ ডাঃ উপাধিটি তাঁদের একচেটিয়া বিষয় নয়। তাঁদের প্রমাণ করতে হবে যে, ডাক্তার পদবীটি একমাত্র তাদেরই পেটেন্টকৃত। আমরা জানি, এটা তাঁরা করতে পারেন না। তাহলে তো ডিভিএম পাশ করেও কেউ ডাঃ লিখতে পারবে না। তাঁরা তো বিএমডিসি’র নিবন্ধনভুক্ত নন। তাঁরা ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। সে কারণেই, এ ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারও তাঁদের নেই। কোন বিষয়ে যাদের কোন বৈধ অধিকার নেই, তাকে অনুসরণ করে আইনের সমর্থনও যুক্তিসঙ্গত নয়। কাজেই, এক্ষেত্রে কোর্টের সিদ্ধান্ত হয়েছে একপেশে ও অযৌক্তিক।

আর হোমিওপ্যাথদের বিষয়েও তাঁদের নাক গলানোর অধিকার নেই। তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা ইন্টিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান, কমপ্লিমেন্টারি ফিজিশিয়ান, ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন প্রাকটিশনার, কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন প্রাকটিশনার, ইত্যাদি পদবী ব্যবহার করতে পারবে। আমরা কী এটাকে ক্ষমতার দাপট ছাড়া আর কিছু বলতে পারি? কে শুনবে তাঁদের কথা?

পিএইচডি, ডি.লিট, ডি.এসসি, ইত্যাদি ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যাক্তিগণ তাদের নামের পূর্বে ড. বা Dr. লিখেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও পিএইচডি, এমডি বা সমমানের ডিগ্রি থাকলে নামের পূর্বে ড. বা Dr. লিখেন। কিন্তু ডাক্তার (ডাঃ) এলো কী-ভাবে? যারা এমবিবিএস পাশ করেন তাঁরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাচেলর বা স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে অর্থাৎ ১৯০০ সনের শুরুর দিকে ব্রিটিশ চিকিৎসকদের Dr. অনুকরণে পাক-ভারত উপমহাদেশের চিকিৎসকরা Dr. লেখা শুরু করেন। ১৯৫০ সনের পর থেকে চিকিৎসকদের মধ্যে ডাক্তার লেখার প্রচলন বেড়ে যায়। দন্ত চিকিৎসকগণও তাঁদের নামের আগে ডাঃ লিখেন।

উল্লেখ্য, হোমিওপ্যাথরা বিকল্প ধারার চিকিৎসক নয়। হোমিওপ্যাথি একটি মৌলিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা অপরিবর্তনীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। কাজেই, হোমিওপ্যাথরা তাঁদের এ সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড থেকেও ডিএইচএমএস ডিপ্লোমাধারীদের ডাঃ উপাধিতে প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া হয় যদিও বোর্ডের ১৯৮৩ সনের অর্ডিনেন্সে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। হোমিওপ্যাথি বোর্ড সেই অর্ডিনেন্স অবশ্যই সংশোধন করতে পারেন তাতে কেউ বাধা দিতে পারবেন না। কিন্তু কেন তা সংশোধন করছেন না এটা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই, রেজিষ্ট্রেশন সনদপ্রাপ্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ ডাঃ পদবী ব্যবহার করলে তা কোনোভাবেই আইনের লঙ্ঘন নয়। যদি তা করতে হয় তাহলে হোমিওপ্যাথি বোর্ডকেই আগে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে।

উল্লেখ্য, হোমিওপ্যাথি বোর্ড হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্র অনুসারে চিকিৎসা করার অধিকার প্রদান করে। কিন্তু সনদপ্রাপ্ত অধিকাংশ চিকিৎসক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্র মেনে চলেন না। এ বিষয়ে কোনো মনিটর করার ব্যবস্থা না থাকায় খুব দ্রুত অধিকাংশ হোমিওপ্যাথ ইতোমধ্যে আদর্শচ্যুত হয়ে গেছেন। তাঁরা নিজেদেরকে বিকল্প ধারার চিকিৎসক বলেই মনে করেন। তাঁরা ভুলে গেছেন তাঁদের নিজস্ব পরিচয়। আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়া একটি বড় মানের অসুখ। ‘বিকল্প ধারার চিকিৎসক’ এই টার্মটি এলোপ্যাথদের সৃষ্টি। দূর্বল হোমিওপ্যাথরা এই টার্মটি গ্রহণ করে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। আত্মপরিচয় ভুলে তাঁরা অবাধে হার্বাল, কম্বিনেশন, পেটেন্ট ব্যবহার করেন। তাঁরা এলোপ্যাথির মতো রোগীর চিকিৎসা করেন কিন্তু রোগীকে কিউর অর্থাৎ আরোগ্য করতে পারেন না। মানসিকভাবে তাঁরা ব্যাধিগ্রস্ত। তাই, বাহির থেকে চাপিয়ে দেয়া কোন কিছুকেই তাঁরা প্রতিহত করতে পারে না। মানসিক স্বাস্থ্য পুনরোদ্ধারের জন্যে অর্থাৎ আরোগ্যের তথা কিউরের জন্যে তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন।

কিউর একটি ইংরেজি শব্দ, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে। যেমন, অসুস্থ মানুষকে পুনরায় সুস্থাবস্থায় ফিরিয়ে আনা, যে কোনো সমস্যার সমাধান করা, পচনশীল যে কোন জিনিষের পচন রোধ করা। শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘আরোগ্য’। আরোগ্য সাধারণতঃ চিকিৎসাক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়- যে চিকিৎসা আসে চিকিৎসকের চিকিৎসা নৈপুণ্যে। রিকভারি শব্দটির অর্থ কষ্টদায়ক লক্ষণ থেকে মুক্তি। মনে হবে যেন কিউর আর রিকভারি একই জিনিষ। তবে তফাৎ হচ্ছে যে, রিকভারি প্রাকৃতিকভাবে আপনা-আপনি সম্পাদিত হতে পারে কিন্তু কিউর নয়। ওষুধের দ্বারা রিকভারি দ্রুত করাকে বলে উপশম। তাতে কিন্তু রোগী কিউর হয় না। আর সে কারণেই, ‘উপশমের জন্যে চিকিৎসা’ চিকিৎসকের লক্ষ্য হতে পারে না। সেটা হতে পারে অপ্রতিরোধ্য ক্ষেত্রে, অন্য কোথাও নয়।

চিকিৎসা ও চিকিৎসকের একমাত্র কর্ম ও উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগার্ত মানুষের চিকিৎসা, তাকে আরোগ্য করা। তাই, চিকিৎসা কর্মটিই একটি আর্ট, বিজ্ঞান নয়। তবে, প্রত্যেক বিজ্ঞানের ব্যবহারিক রূপটাই হচ্ছে আর্ট। এলোপ্যাথিতে উপশম আছে, কিউর বা আরোগ্য নেই। তাঁদের মূল কথা হলো- You cannot cure patients-you can only treat them; if you pretend to cure, you are a quack অর্থাৎ রোগীকে কেবল চিকিৎসা করা যায়, আরোগ্য করা যায় না। আরোগ্যের দাবি যারা করে তারা হাতুড়ে। এটাই বৃটেনের মেডিক্যাল ফ্যাকালটির শিক্ষা। ফাদার অব মেডিসিন হিপোক্রেটিস বলেন- Art long, life short, cure unknown. অর্থাৎ বিদ্যা দীর্ঘ, জীবন সংক্ষিপ্ত, আরোগ্য অজানা। কিন্তু হোমিওপ্যাথির শিক্ষা শুরুই হয় আরোগ্য দিয়ে। Homoeopathy says, “You may cure if you will take the trouble to learn the art. Curing is the only excuse for your existence as a physician, and if you do not cure, you are a failure.” অর্থাৎ রোগীকে আরোগ্য করতে চিকিৎসকদের কৌশলগত মেধা খাটাতে হয় যা বিনা পরিশ্রমে হবার নয়। তাঁদের ধৈর্য্য ধরে শিখতে হয় হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞানের প্রায়োগিক বিষয়গুলি। আরোগ্যকাজে নিয়োজিত হওয়াতেই তাঁদের অস্তিত্ত্ব বজায় থাকে, নূতবা তাঁরা ব্যর্থ।

কিন্তু বর্তমানে হোমিওপ্যাথদের মাঝে রোগীকে উপশম দেয়ার প্রবনতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এটা এলোপ্যাথির মতো অ-সদৃশ্য চিকিৎসা । তাতে, রোগী আরোগ্য হয় না, রোগটা চাপা পড়ে মাত্র। যেমন, সালফারের রোগীকে স্যন্টোনিন ১X বা ২X কয়েকমাত্রা দিলে কৃমি মরে ডায়েরিয়া কমে যাবে, নেট্রাম মিউরের রোগীকে চিনিনাম সালফের ১X বা ২X দিনে কয়েকবার দিলে ম্যালেরিয়া জ্বর সাময়িকভাবে ছাড়বে। রোগী ও চিকিৎসক ওষুধের এই প্রাথমিক ক্রিয়া দেখেই তৃপ্তি বোধ করেন। রোগের নাম অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন তাঁদের নিকট একটি বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে যদিও ওষুধ নির্বাচন সদৃশ্য হয়নি তবুও কাজ করবে। কারণ, আংশিক সাদৃশ্যবশতঃ ওষুধ সাময়িকভাবে জ্বর বা কৃমি দমন করে এবং এলোপ্যাথির ধারায় রোগ চাপা দেয়। এই পদ্ধতির চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি বিরুদ্ধ হলেও- স্পেসিফিক, প্যাটেন্ট, ওষুধের সংমিশ্রণ, টনিক, ইত্যাদি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এগুলো কোনটাই হোমিও ওষুধ নয়।

শুধু তাই-ই নয়, তাঁরা হারবাল ওষুধও রোগীতে ব্যবহার করেন। কারণ, তাতে রোগী দ্রুত উপশম বোধ করে। কেউ কেউ বলেন, এ সব তথাকথিত ওষুধের মধ্যে স্টেরয়েড থাকে। কিন্তু রোগীরা তো আর সেসব দেখতে পারেন না। এটা দেখার জন্যে রয়েছে ড্রাগ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সেটা অবশ্যই আছে, তবে তা নাম সর্বস্ব। কাজেই, রোগীদের তথা মানুষের সেটা মেনে নেয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই। কিন্তু সেসব চিকিৎসার পরবর্তী স্তরে রোগীর অবস্থা অবশ্যই আরো খারাপ হয়, যাকে অন্য নামের রোগ বলে অভিহিত করা হয়। এরপর অনেক চিকিৎসা করা হলেও রোগী শুধু জটিলতার দিকেই যেতে থাকে, আরোগ্য আর হয় না। কারণ, রোগীকে ধৈর্য ধরে পর্যবেক্ষণ না করে অসুখের মূলে পৌঁছা অসম্ভব।

উল্লেখ্য, ওষুধ রাসায়নিক স্তরে শুধু প্রাথমিক ক্রিয়া প্রদর্শন করে। তার দ্বারা উপশম দেয়া যায়, আরোগ্য করা যায় না। কিন্তু ওষুধের রাসায়নিক স্তরটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ভেঙ্গে দিলে তার আভ্যন্তরীণ সত্তা ও গুণের বিকাশ ঘটে। এর ভিতরে লুকিয়ে থাকা শক্তির প্রকাশ হয় এবং এর কার্যক্ষমতাও বাড়ে। ওষুধের সেই ক্ষমতা জেনে যথাস্থানে তা প্রয়োগ করতে পারলে রোগী অবশ্যই আরোগ্য হবে। এটাই প্রাকৃতিক বিধান। সেটা জানার জন্যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

অর্গাননের ভূমিকায় ডঃ হ্যানিম্যান উল্লেখ করেছেন- জৈব রসায়নের অস্তিত্ব শুধুমাত্র রাসায়নিক ক্রিয়া বা যান্ত্রিক ক্রিয়ায় থাকতে পারে না জীবনীশক্তি ছাড়া। বস্তুর এই সূক্ষ্মতত্ত্ব উপলব্ধি করেই তিনি তাঁর চিন্তাধারা বহিঃপ্রকাশ করেছিলেন। কাজেই, রাসায়নিক বা যান্ত্রিক পদ্ধতি তা যতে উন্নতই করা হোক না কেন, জীবনীশক্তিকে অতিক্রম করতে পারে না। ঝর্ণা কখনো তার উৎস থেকে উচু হতে পারে না। হ্যানিম্যান তাঁর মানসনেত্রে এই সূক্ষ্মতত্ত্বই দেখেছিলেন যা আজও অভ্রান্তভাবে সত্য। কিন্তু এলোপ্যাথির দৃষ্টি রসায়ন নির্ভর, যান্ত্রিক নির্ভর। সেখানে জীবনীশক্তি বলে কিছু নেই। সেখানে কোনো নিশ্চয়াত্মক নীতি নেই যার মাধ্যমে মানুষের ব্যাধিকে স্থায়ীভাবে আরোগ্য করা যায়। রোগের কারণ, ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সেখানে সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু হ্যানিম্যান সেই ভ্রান্তি দূর করেছেন তাঁর নীতি ও আদর্শের মৌলিকত্বের কারণে। তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের এক মন ও এক নীতি যা এগিয়ে চলে লেজার রশ্মির মতো।

ওষুধ রাসায়নিক স্তরে শুধু প্রাথমিক ক্রিয়া প্রদর্শন করে। তার দ্বারা উপশম দেয়া যায়, আরোগ্য করা যায় না। কিন্তু ওষুধের রাসায়নিক স্তরটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ভেঙ্গে দিলে তার আভ্যন্তরীণ সত্তা ও গুণের বিকাশ ঘটে। এর ভিতরে লুকিয়ে থাকা শক্তির প্রকাশ হয় এবং এর কার্যক্ষমতাও বাড়ে। ওষুধের সেই ক্ষমতা জেনে যথাস্থানে তা প্রয়োগ করতে পারলে রোগী অবশ্যই আরোগ্য হবে। এটাই প্রাকৃতিক বিধান। সেটা জানার জন্যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

হ্যানিম্যানের ক্রণিক মায়াজমের আবিষ্কার ভ্রান্ত রোগের কারণ-তত্ত্বের ওপর এক মরণাঘাত। তাই, ক্রণিক মায়াজম সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান অর্জন না করে কেউ হোমিওপ্যাথ হতে পারেন না। কারণ, রোগীতে ক্রিয়াশীল বা অন্তর্নিহিত মায়াজমের ধারণা না থাকলে আমরা প্রকৃত ওষুধ নির্বাচন করতে পারি না। মায়াজমের প্রকৃতিই ওষুধ নির্বাচনের নির্দেশক। এছাড়া প্রকৃত ওষুধ নির্বাচন করা অসম্ভব। আমাদের জানতে হবে, সদৃশ নীতি’র মর্মার্থ। আসলে সদৃশ নীতিটি মায়াজম কেন্দ্রিক। মায়াজমকে বাদ দিয়ে আপাততঃ সদৃশ নীতির প্রয়োগে ক্রণিক রোগীর চিকিৎসা করা যায় না। কারণ, সেটা ভাসা-ভাসা, উপরের স্তরের, গভীরের নয়। এ ব্যর্থতাই হ্যানিম্যানের আত্ম-জিজ্ঞাসা, প্রেরণার উৎস। সেই প্রেরণার প্রেষনে তিনি নতুন উদ্যমে তীব্র গতিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। ফলে- রোগের প্রকৃত কারণ, ওষুধ ও চিকিৎসার অভ্রান্ত পদ্ধতি আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু, খুব সহজে তা উপলব্ধি করা যায় না।

আমি ডিএইচএমএস পাশ করে কী পরিচয়ে চিকিৎসা করবো সেটা নিয়ে প্রথমে একটু সংকটে পড়েছিলাম। কারণ, হ্যানিম্যান তাঁর অর্গাননে কোথাও ডাক্তার শব্দটি ব্যবহার করেন নাই। তিনি চিকিৎসকদের ‘ফিজিশিয়ান’ বলে উল্লেখ করেছেন। কী কী বৈশিষ্ঠ্য থাকলে একজন মানুষ ‘হোমিওপ্যাথিক ফিজিশিয়ান’ হতে পারেন তার বর্ণনাও তিনি অর্গাননে দিয়েছেন। আমি সেভাবেই হোমিওপ্যাথিক ফিজিশিয়ান বা চিকিৎসক হতে চেষ্টা করেছি। এটা বাস্তবায়ন করতে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু, কোনো চিকিৎসকের ছত্রছায়ায় আমি কখনো ছিলাম না। কাজেই, কোন চিকিৎসকের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে আমার ওপর পরেনি। ডিএইচএমএস কোর্সের ফার্স্ট ইয়ারে মাত্র কয়েকদিন ক্লাশ করেছি। প্রশ্ন করার জন্যে আমার বিরুদ্ধে কলেজের প্রিন্সিপালের নিকট অভিযোগ করেন আমারই জনৈক একজন শিক্ষক। তাতে, আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আর তখন থেকেই কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু হোমিওপ্যাথি পড়ার ইচ্ছে আমি বাদ দেইনি। বরং আমার জেদ আরো বেড়ে গেলো। আমার মিডিয়াম ছিল ইংরেজী এবং সেক্ষেত্রে আমি একা। আমাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না। তাই, একান্তভাবে হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে অর্গাননের বিষয়গুলি আত্মস্থ করতে নিরলস প্রয়াস নিয়েছিলাম। এটা আমার নিকট ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, নয় বার উচ্চতর পড়াশুনা করার জন্যে কমনওয়েলথ-সহ অন্যান্য স্কলারশিপে যোগ্যতা প্রমাণ করেও কোন অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু আমি থেমে যাইনি।

হোমিওপ্যাথি ছিল ভিন্ন একটি বিষয় যা আমি কল্পনা করিনি। মনে করেছিলাম খুব সহজই হবে। কিন্তু বইপত্র কিনে পড়তে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেলাম। নতুন নতুন শব্দ যা কখনও শুনিনি, সেগুলি আত্মস্ত করবো কীভাবে? এদিকে আমাকে সাহায্য করারও কেউ নেই। আমি একা, শুধু একা। যাহোক, ক্লাশ না করেও ডিএইচএমএস ভালোভাবেই পাশ করেছি। ইন্টার্নি করেছি দু’বার। প্রথমবারের ইন্টার্নির কোনো ডকুমেন্ট কলেজে সংরক্ষণ করা হয়নি, যদিও আমার নিকট তার প্রমাণ ছিল, এখনো তা আছে। যাহোক, আবার করলাম। সেটা ছিল একটা থিসিসের মতো। তার কপি ময়মনসিংহে অবস্থিত হোমিওপ্যাথিক কলেজে ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডে জমাও দিয়েছি। কিন্তু, ডাক্তার (ডাঃ) লিখতে আমার মন সায় দেয়নি। আমি সর্বদা নিজেকে একজন ‘হ্যানিমেনিয়ান হোমিওপ্যাথ’ ভাবতাম। আমার সাইনবোর্ডেও তা-ই লেখা থাকতো। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর হওয়া সত্বেও সাইনবোর্ডে তা কখনো উল্লেখ করিনি।

ড. হ্যানিম্যানের নির্দেশ মোতাবেক ওষুধ নির্বাচন করা খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেভাবে রোগী দেখতে গেলে পারিশ্রমিক বেশি করা ছাড়া উপায় নেই। আমি তো তা বাড়াতে চাই না। কিন্তু, এর উপায়ই বা কী? হোমিওপ্যাথিতে সফটওয়্যারের ব্যবহারে আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তাতে, রোগী দেখার পারিশ্রমিক আমি সর্বনিম্ন করতে পেরেছি। যদিও কম্পিউটারে রোগী দেখার জন্য বেশি পারিশ্রমিক নেওয়ার কথা অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু আমি তা করিনি। আমার বার বার মনে পড়ে, হ্যানিম্যান বেঁচে থাকলে তিনিও সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন এবং আনন্দিত হতেন।

জেমস্ টাইলার ক্যান্ট, যিনি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচনের জটিল বিষয়টিকে পদ্ধতিগতভাবে এমনই এক চমৎকার রেপার্টরি গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন যা এখনো পর্যন্ত অতুলনীয়। সফটওয়্যারের ভিত্তি হলো সেই গ্রন্থ। ক্যান্ট বেঁচে থাকলে তিনিও তাঁর রচিত রেপার্টরির সফটওয়্যার দেখে ও ব্যবহার করে চমৎকৃত হতেন।

হোমিও দর্শনভিত্তিক মৌলিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি। তবে, ওষুধ নির্বাচনে এর কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমন- হ্যানিম্যানিয়ান পদ্ধতি, ক্যান্টিয়ান পদ্ধতি, ভিথাউলকিয়ান পদ্ধতি, শঙ্করিয়ান পদ্ধতি। এ ছাড়াও আরো কিছু এক্সপার্ট সিস্টেম আছে। এসব কিছুর সঙ্গে আমি পরিচিত হলেও ঈষৎ পরিবর্তিতরূপে নিজেকে ‘হ্যানিম্যানিয়ান হোমিওপ্যাথ’ ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।

যাহোক, পড়াশুনার শেষ নেই। আবার ভর্তি হলাম ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিতে। ডিপ্লোমা কোর্স ‘ডি. আই. হোম.’ ও পোষ্টগ্রাজুয়েট কোর্স ‘ডি. এইচ. এম.’ শেষ করেছি চার বছরে। কষ্টকর ছিল কোর্সগুলো কৃতকার্যতার সঙ্গে শেষ করা। এক্ষেত্রে আমাকে যিনি সুপারভাইজ করেছেন তাঁকে আমি দেখিনি, কখনো ফোনে বা ই-মেইলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, তাঁর অতি সংক্ষিপ্ত নির্দেশ আমাকে প্রতিটি বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে। দুটি কোর্সে ছিল ৩০+৩০= ৬০টি প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর মনে হতো আমার জানা। কিন্তু আমার প্রতি নির্দেশ ছিল আমি যেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে নিজস্ব স্টাইলে কিছু লিখি। কিন্তু, আমি কোনো প্রশ্নের উত্তরই একবারে শেষ করতে পারিনি। একাধিকবার লিখতে হয়েছে এবং ডাকে পাঠাতে হয়েছে লন্ডনে। সুপারভাইজার সেটিসফাইড না হওয়া পর্যন্ত চলতো আমার লেখা। অবশেষে তিনি মার্কিং করতেন। আমার কখনো মনে হতো বাদ দেই এ সব কিছু। তবে, এই ধরণের দ্বিধা-দন্দ্বে কখনও ম্রিয়মান হয়ে যায়নি। আমি বিশ্বাস করি, লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে যথার্থ ভাবনা সেটা পজিটিভ হতেই হবে। সে ভাবনাতেই সামনে এগিয়ে চলতে হবে, এর কোন বিকল্প হতে পারে না।

প্রশ্নের উত্তর লিখতে কেমন ধরণের চিন্তা করতে হতো তার একটি নমুনা উপস্থাপন করছি। প্রশ্নটি ছিল ‘High potency medicine is airy, it contains nothing-explain.’ এর উত্তর লিখতে আমাকে সবচেয়ে বেশী মানসিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারণ, কোন ড্রাগের অণু-পরমাণুর অস্তিত্ব যেখানে নেই তাকে তো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ওষুধ বলা চলে না। মেডিকেল সায়েন্সে তো তাই বলে। কিন্তু উচ্চশক্তির ওষুধ প্রায়োগিক দিক থেকে খুবই কার্যকরী। কীভাবে তা সম্ভব? কিছু যদি না-ই থাকে তা কাজ করে কী দিয়ে? মানুষ গভীরভাবে তার মনের মধ্যে না ভাবলে কোনো কিছুরই যথাযথ সমাধান সে পেতে পারে না।

আমরা জানি, সব জানার মাঝে অসংখ্য অজানা জিনিষ লুকিয়ে থাকে। মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে এই যে, যে জিনিষটা সে জানে না সে বিষয়ে তার জ্ঞানের স্বল্পতা বা অপূর্ণতা ঢাকবার জন্যে, সেই জিনিষটার অস্তিত্বটাকেই সে সরাসরি অস্বীকার করে বসে অথবা বলে যে, সেটা একটা বিমূর্ত্ত ভাবমাত্র। তাই, যা কিছু আমাদের ইন্দ্রিয়ের আওতায় আসে বা যা কিছু আমরা প্রত্যক্ষ করি, কেবল তারই অস্তিত্ব স্বীকার করি। আর যা কিছু ইন্দ্রিয়ের আওতার বাইরে তার সম্বন্ধে আমরা কিছু বলতে পারি না। সুতরাং ইন্দ্রিয়ের আওতার সীমার মধ্যেই আমাদের কর্মক্ষেত্র সীমাবদ্ধ। আর সে কারণেই, আমরা প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারি না। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা এবং ত্বক হচ্ছে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়। কিন্তু জ্ঞানেন্দ্রিয়ের জ্ঞান সাধারণভাবে চলার জন্যে। পশুদের এই জ্ঞান মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।

আলসেসিয়ান কুকুর, শকুণ, বাঘ, বাঁদুরের নাক দিয়ে গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা অসাধারণ। শকুণ ও বাজপাখির দৃষ্টিশক্তি অনেক প্রবল। অন্ধকারে প্যাঁচকের দৃষ্টি নিখোঁত। কচ্ছপ, ইলিশ মাছ, স্যালমন ফিশ, বন্য হাতি ও অন্যান্য জন্তু, কিছু পাখি মহাকাশীয় ও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রতিকূল-অনুকূল পরিবেশ শনাক্ত করতে পারে। কিন্তু মানুষের আছে অতিন্দ্রিয় অনুভূতি লাভের ক্ষমতা যা অন্য কোনো জীবের নেই। অতিন্দ্রিয় যন্ত্রটি হচ্ছে আমাদের মন। এ বিশ্বে যা কিছু আছে তাদের প্রত্যেকের মন আছে। কোথাও অবিকশিত, কোথাও আংশিক বিকশিত, কোথাও বা পূর্ণ বিকশিত। ধাতব-অধাতব, জীবিত-মৃত, জঙ্গম-স্থাবর, ছোট-বড় সকলেরই মন আছে। কারণ, সব কিছুই একই তরঙ্গের বিভিন্নমাত্রার ঘনিভূত রূপ মাত্র। কাজেই, তরঙ্গের যথাযথরূপ জেনে আমরা প্রতিটি বস্তুর মধ্যে অন্তর্নিহিত গুণাবলী সম্বন্ধে ধারণা নিতে পারি এবং তাদেরকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যে ব্যবহার করতে পারি।

এ বিশ্বে কোন কিছুই নিস্তরঙ্গ নয়। সবই তরঙ্গময়। রোগ-ব্যাধিও তার বৈশিষ্ঠ্য অনুযায়ী তরঙ্গ সৃষ্টি করে যা আমরা অনুভব করি। এক্ষেত্রে মন আমাদের সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী যন্ত্র। এছাড়া অন্য কোনো যন্ত্র অনুভূতির বিষয়কে সনাক্ত করতে পারে না। আমরা জানি, রোগী আরোগ্য হতে চায়। কিন্তু কীভাবে? শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, ব্যাধি-সৃষ্ট অনুভূতিসমূহ দূর করা। এ কাজটি সর্বাপেক্ষা সুন্দরভাবে সমাধান হতে পারে সমধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে (যদি তা বিপরীত দিক থেকে প্রয়োগ করা হয়)।

আমাদের মনে রাখতে হবে, মনেও যা রয়েছে, স্থুল বস্তুতেও তা আছে। কিন্তু, মন স্থুল বস্তুকে সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। প্রতিটি বস্তু থেকে যে তরঙ্গ বের হয় তা তন্মাত্র বাহিত হয়ে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মনে পৌঁছলেই আমরা বস্তুটিকে সনাক্ত করতে পারি। তাই, বস্তুকে ওষুধে পরিণত করতে হলে মনের মতো সূক্ষ্ম করে নিতে হয়। সে কারণেই, বস্তুর মধ্যে নিহিত অবিকশিত মনকে বিকশিত করতে হয়। আমাদের যত ব্যাধি আছে, তার প্রায় সবগুলিরই তরঙ্গ আমরা বস্তু জগৎ থেকে পেয়ে থাকি। তার যথাযথ প্রয়োগে আমরা রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করি। প্রকৃতির এ এক আশ্চর্য বিধান। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি হলো সৃষ্টিকর্তার কাজের স্টাইল। মানুষ এই স্টাইল জানতে পারে যদি তার মন থেকে পঞ্চভুতকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল আয়ত্ব করে। সত্যকে জানার এটাই একমাত্র পদ্ধতি। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তা কখনো সম্ভব নয়। এলোপ্যাথি যান্ত্রিক পদ্ধতি নির্ভর। তাই, তা কখনো হোমিওপ্যাথির সূক্ষ্ম-তত্ত্ব অনুধাবন করতে পারবে না। সঙ্গত কারণেই এলোপ্যাথগণ কোন রোগীকেই আরোগ্য করতে পারেন না।

আমরা হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, ইত্যাদি মৌলিক বস্তুর কথা বলি। পরে দেখা গেলো, সেগুলো ইলেকট্রন, প্রোটন বা নিউট্রন দিয়ে গঠিত। প্রোটন, নিউট্রন আবার কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। এদের চেয়েও সূক্ষ্ম সত্ত্বা থাকতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে আর কোনো উপায় না পেয়ে আমরা বলতে বাধ্য হই যে, ওই সত্ত্বাগুলি হয় ইলেকট্রন, না হয় প্রোটন, না হয় নিউট্রন। একথা বলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। ঠিক তেমনই আমাদের মনেও এমন কিছু সত্ত্বা থাকতে পারে যা চিত্তাণুও নয় আবার ইলেকট্রনও নয়। এই সূক্ষ্ম সত্ত্বাগুলি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এক রহস্যময় উৎসারণ। এই সত্ত্বাগুলোই ‘মাইক্রোবাইটাম’ বা ‘অণুজীবৎ’। এদের কেউ কেউ উন্নতমানের অণুবীক্ষণের আওতায় আসে- যা ভাইরাস নামে পরিচিত। আবার কেউ কেউ আসে না কিন্তু তাদের উপস্থিতির জন্যে যে স্পন্দনের সৃষ্টি হয় তা আমাদের অনুভূতির আওতায় আসতে পারে। অতি সূক্ষ্ম উৎসারণগুলি আমাদের অনুভূতির আওতায় আসে না, কিন্তু বিশেষ ধরণের ইন্দ্রিয়ানুভূতির আওতায় আসে। এই বিশেষ ধরণের ইন্দ্রিয়ানুভূতির অধিকারী তাঁরাই যাঁরা মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে যথেষ্ট উন্নতাবস্থাপ্রাপ্ত (Microvitum in a Nutshell-P. R. Sarker)।

মহান দার্শনিক পি আর সরকারের মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব একেবারে সর্বাধুনিক। মাইক্রোবাইটাম হচ্ছে ভূমাচৈতিক ধাতুর রহস্যজনক উৎসারণ। এরা গ্রহ, উপগ্রহ, নীহারিকা-ছায়াপথ-নক্ষত্র-উল্কা অতিক্রম করে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারে। এদের উৎপত্তি, অস্তিত্বরক্ষা, সংখ্যাবৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। কিন্তু এরা অন্যান্য জীবিত সত্ত্বার মতো নয়। এরা কার্বন-পরমাণু দিয়ে গঠিত নয় বরং লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন ধরণের মাইক্রোবাইটাম মিলিত হয়ে কার্বন-পরমাণু গঠন করে। এই মাইক্রোবাইটাম প্রাণশক্তির উৎস। এরাই গ্রহে-উপগ্রহে নক্ষত্রে প্রাণীনতার আদি বাহক-কার্বন-পরমাণু নয়। এই মাইক্রোবাইটামরা তাদের রহস্যময় গতিবিধির দ্বারা বিভিন্ন জ্যোতিস্কে অজস্র শরীর ও মন সৃষ্টি করে চলেছে। আবার তারাই বিভিন্ন গ্রহে, উপগ্রহে মানস সত্ত্বাকে, জৈব-অজৈব সত্ত্বার শরীর ধ্বংস করে চলেছে। কাজেই, প্রাণের মূল কারণএককৌশিক প্রোটোজোয়া নয়। প্রাণের উৎস হলো এই মাইক্রোবাইটাম।

ক্যান্ট তার হোমিওপ্যাথিক দর্শনে ‘সিম্পল সাবস্টেন্স’র কথা উল্লেখ করেছেন যা অনেকটা মাইক্রোবাইটাম এর মতো। আমি যখন মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের মাধ্যমে উচ্চশক্তির ওষুধের কার্যকারীতা ব্যাখ্যা করেছিলাম তখন আমার সুপারভাইজার আমার লেখায় মার্কিং করলেন।

আমাদের যত ব্যাধি আছে, তার প্রায় সবগুলিরই তরঙ্গ আমরা বস্তু জগৎ থেকে পেয়ে থাকি। তার যথাযথ প্রয়োগে আমরা রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করি। প্রকৃতির এ এক আশ্চর্য বিধান। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি হলো সৃষ্টিকর্তার কাজের স্টাইল। মানুষ এই স্টাইল জানতে পারে যদি তার মন থেকে পঞ্চভুতকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল আয়ত্ব করে। সত্যকে জানার এটাই একমাত্র পদ্ধতি। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তা কখনো সম্ভব নয়। এলোপ্যাথি যান্ত্রিক পদ্ধতি নির্ভর। তাই, তা কখনো হোমিওপ্যাথির সূক্ষ্ম-তত্ত্ব অনুধাবন করতে পারবে না। সঙ্গত কারণেই এলোপ্যাথগণ কোন রোগীকেই আরোগ্য করতে পারেন না।

ড. হ্যানিম্যান উচ্চ মানসিকতার লোক ছিলেন। তাঁর সময়ে অনেকে তাঁকে বুঝতে পারেন নি। এমনকি এখনো অনেকে বুঝতে পারেন না। এক বিশেষ ধরণের অনুভূতি না থাকলে কী করে এক ফোঁটা বা এক গ্রেইন ওষুধের ১০০-১৫০০ ভগ্নাংশের ক্রিয়া তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন? এর আগে পৃথিবীতে ওষুধের এত সূক্ষ্ম অবস্থান সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। তিনি ওষুধের এত সূক্ষ্মাংশেও ওষুধের বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছিলেন। তাঁর মানসপুত্র ক্যান্ট ১০০-১৩০০০০০০ ভগ্নাংশেও ওষুধের বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন। অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। কারণ, কোন বস্তু ১০০-১২ ভগ্নাংশের নীচে মৌলিকত্ত্ব হারিয়ে ফেলে। তাকে আর সেই বস্তু বলা যাবে না। তার রাসায়নিক ক্রিয়াও আর সে রকম থাকবে না। সঙ্গত কারণেই, এলোপ্যাথরা কোন বস্তুকে হোমিওপ্যাথির মতো অস্বাভাবিক ভগ্নাংশে বিভক্ত করে ওষুধে রুপান্তরের বিষয়টাকে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু আজও যারা ড. হ্যানিম্যানের অর্গানন’র ৫ম সংস্করণ অনুযায়ী চিকিৎসা করেন তাঁরা এর সত্যতা প্রতিনিয়তই প্রমাণ পাচ্ছেন। অর্গাননের শেষ অর্থাৎ ৬ষ্ঠ সংস্করণ আরো গভীর, তাৎপর্যপূর্ণ ও ব্যবহারিক দিকে চমৎকার। বিষয়টি শুধুই বিশ্বাসের বা অবিশ্বাসের নয়। বিশ্বাস অনুযায়ী কাজও করা দরকার।

উল্লেখ্য, ভূত-প্রেতে যারা গভীরভাবে বিশ্বাস করে তারা দিনের বেলাতেও ভূত-প্রেত দেখবে। আর যাদের ভূত-প্রেতে আস্থা নেই তারা গভীর অন্ধকারেও ভূত-প্রেত দেখবে না। এটা দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। বুঝতে না চাইলে কেউ বুঝবে না, জানতে না চাইলে কেউ জানবে না। কিন্তু আমি হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা শত শত রোগীর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি। কাজেই, রাসায়নিক ওষুধ দিয়ে যারা চিকিৎসা করেন তারা যাই কিছু বলুন না কেন, তাতে হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে আমার অবস্থানে সামান্যতম পরিবর্তনও হবে না। কারণ, আমি তাঁদের মতো ডাক্তার নই। আমি মনে-প্রাণে একজন হোমিওপ্যাথ। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এলোপ্যাথির কোনো নির্দেশিকাই আমি মনি না। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক, সেনিটাইজার, পিপিই কোনটাই ব্যবহার করিনি। প্রোটিনের জন্যে মাংস, ডিম খাই না। প্রতিদিনই সকাল-বিকাল রোগী দেখেছি। রোগীকে সামনে বসিয়েই ব্যবস্থা দিয়েছি। বলেছি, আমি করোনায় আক্রান্ত হবো না, কখনই না। কারণ, আমি হোমিও প্রোটেকটেড। আমার বেশীর ভাগ রোগীই ডাক্তারদের দ্বারা চিকিৎসিত হয়ে আসে। সেখানে ব্যর্থ হয়ে, প্রচুর অর্থ খরচ করে হতাশায় ভেঙ্গে রুধিরেতে রাঙ্গা হয়ে যখন কেউ হোমিওপ্যাথিতে আরোগ্য লাভ করে তার অনুভূতির মূল্য অপরিসীম।

সেজন্যে আমি বলি, চিকিৎসকের মূল্যায়ন অন্য কোনো পদ্ধতিতে হতে পারে না, রোগীরা ছাড়া। সে রোগী সামাজিকভাবে তুচ্ছ হতে পারে, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হতে পারে-তাতে কিচ্ছু আসে-যায় না।

লেখক:
প্রফেসর (অবঃ) পরেশ চন্দ্র মোদক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
মোবাইল- ০১৭১৬-৪৫২৮৫২

শেয়ার করুন: