

নাকের পলিপাস একটি সাধারণ অথচ জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা যা অনেক সময় অবহেলিত থেকে যায়। এটি মূলত নাকের ভেতরের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে সৃষ্ট অস্বাভাবিক টিস্যু বৃদ্ধি যা দেখতে ছোট মাংসপিণ্ডের মতো। এই পলিপাস নাকের ছিদ্র আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে পারে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করে। যদিও এটি প্রাণঘাতী নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
পলিপাসের গঠন ও শ্রেণিবিন্যাস
নাকের পলিপাস সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো ইথময়রেল পলিপ যা নাকের ঝিল্লিতে প্রদাহজনিত কারণে গঠিত হয় এবং সাধারণত নাকের দুই পাশে দেখা যায়। অন্যটি হলো মেক্সিলারি এনট্রোকনাল পলিপ যা একপাশে বেশি দেখা যায় এবং শিশুদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। এই পলিপাসগুলো সাধারণত নরম, ধূসর বা গোলাপি রঙের হয় এবং স্পর্শ করলে নড়াচড়া করে।
পলিপাসের কারণ
নাকের পলিপাসের মূল কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ। এটি হতে পারে অ্যালার্জি, হাঁপানি, সাইনাস ইনফেকশন, ধুলাবালি, ধূমপান, অথবা ঋতু পরিবর্তনের কারণে। অনেক সময় বংশগত কারণেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। যাদের পরিবারে পলিপাসের ইতিহাস রয়েছে তাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল বা যাদের শরীরে প্রদাহজনিত রোগ রয়েছে তাদের মধ্যেও পলিপাসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
লক্ষণসমূহ
নাকের পলিপাসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারে না যে সে এই সমস্যায় ভুগছে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
নাক দিয়ে পানি পড়া এবং একনাগাড়ে হাঁচি
মাথাব্যথা এবং চোখের চারপাশে চাপ অনুভব
ঘুমের সময় নাক ডাকা এবং অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়া
দীর্ঘমেয়াদি সাইনাস ইনফেকশন
এই লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং সাধারণ চিকিৎসায় উপশম না হয় তাহলে পলিপাসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নির্ণয় ও পরীক্ষা
নাকের পলিপাস নির্ণয়ের জন্য সাধারণত একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়। চিকিৎসক নাকের ভেতর টর্চের আলো দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজনে নাসাল এন্ডোস্কোপি বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে পলিপাসের অবস্থান ও আকার নির্ধারণ করেন। কখনো কখনো অ্যালার্জি টেস্ট বা ব্লাড টেস্টও করা হয় রোগের মূল কারণ নির্ধারণের জন্য।
চিকিৎসা পদ্ধতি
নাকের পলিপাসের চিকিৎসা নির্ভর করে পলিপের আকার, অবস্থান এবং রোগীর উপসর্গের তীব্রতার উপর। চিকিৎসা পদ্ধতিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়
প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে স্টেরয়েড স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহার করা হয় যা পলিপের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফেক্সোফেনাডিন জাতীয় অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধও ব্যবহৃত হয় যা অ্যালার্জির উপসর্গ কমায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সাধারণত অল্প আকারের পলিপাসের ক্ষেত্রে কার্যকরী।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা
যদি পলিপাস দীর্ঘমেয়াদি হয় এবং বারবার ফিরে আসে তাহলে চিকিৎসক দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড থেরাপি বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধের পরামর্শ দেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর জীবনযাত্রার ধরন, খাদ্যাভ্যাস এবং অ্যালার্জির ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়া হয়।
অপারেশন
যদি ঔষধে কাজ না করে এবং পলিপাস বড় হয়ে যায় অথবা শ্বাসপ্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনকে বলা হয় ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি বা এফইএসএস। এতে নাকের ভেতরের পলিপাস অপসারণ করা হয় এবং সাইনাসের পথ পরিষ্কার করা হয়। তবে অপারেশনের পরও পলিপাস পুনরায় ফিরে আসতে পারে তাই নিয়মিত ফলোআপ প্রয়োজন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
অনেকেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে পলিপাসের সমাধান খোঁজেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর শারীরিক গঠন, জীবনযাত্রা এবং রোগের ইতিহাস বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ দেওয়া হয়। হোমিও চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার ছাড়াই পলিপাস নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি এবং ধৈর্য্য প্রয়োজন।
ঘরোয়া প্রতিকার
নাকের পলিপাসের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার উপকারী হতে পারে। যেমন
গরম পানির ভাপ নেওয়া
আদা, রসুন ও হলুদের ব্যবহার
ধুলাবালি ও ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে থাকা
অ্যালার্জিজনিত খাদ্য যেমন গরুর দুধ, ডিম, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি পরিহার করা
নাক পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত স্যালাইন ওয়াটার ব্যবহার
এই প্রতিকারগুলো উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
নাকের পলিপাস প্রতিরোধে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন
পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
ধূমপান এবং ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা
নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যালার্জির উৎস চিহ্নিত করে তা থেকে দূরে থাকা
এই অভ্যাসগুলো রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং পলিপাসের পুনরাবৃত্তি কমায়।
সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
নাকের পলিপাস শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট, ঘুমের সমস্যা এবং মাথাব্যথা রোগীর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অনেক সময় রোগী বিষণ্নতায় ভোগে এবং সামাজিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। তাই এই রোগের চিকিৎসা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের ক্ষেত্রে পলিপাস
শিশুদের মধ্যে মেক্সিলারি এনট্রোকনাল পলিপ বেশি দেখা যায়। এটি তাদের ঘুম, খাওয়া এবং পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে। শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা আরও সতর্কতার সঙ্গে করতে হয় এবং অপারেশনের প্রয়োজন হলে তা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করতে হয়।
পলিপাসের পুনরাবৃত্তি
নাকের পলিপাস অপারেশনের পরও পুনরায় ফিরে আসতে পারে। এটি প্রতিরোধে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, ঔষধ গ্রহণ এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। অনেক সময় রোগী অপারেশনের পর চিকিৎসা বন্ধ করে দেয় যা পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি বাড়ায়।
নাকের পলিপাস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে জটিলতায় রূপ নিতে পারে। এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য যদি সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা যায়। রোগের লক্ষণগুলো বুঝে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং কোনো অবস্থাতেই নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
