

হৃদ্রোগ চিকিৎসায় এনজিওপ্লাস্টি (Angioplasty) একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি। এটি সংকীর্ণ বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনিকে পুনরায় উন্মুক্ত করে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। তবে অনেক রোগীর মনে প্রশ্ন জাগে—এই চিকিৎসার পরেও কি আবার ব্লক হতে পারে? উত্তর হলো, হ্যাঁ। এনজিওপ্লাস্টি করানোর পরও ধমনিতে পুনরায় ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ফিচারে আমরা বিশ্লেষণ করব কেন এমন হয়, কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, এবং রোগী ও চিকিৎসকের ভূমিকা কী।
এনজিওপ্লাস্টি কী এবং কেন করা হয়
এনজিওপ্লাস্টি শব্দটি এসেছে দুটি অংশ থেকে—‘অ্যাঞ্জিও’ অর্থ রক্তবাহী নালী এবং ‘প্লাস্টি’ অর্থ পুনর্গঠন। এটি একটি মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতি, যেখানে ধমনির সংকীর্ণ অংশে একটি বেলুনযুক্ত ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে বেলুনটি ফোলানো হয়। এর ফলে ধমনির গহ্বর প্রসারিত হয় এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। অনেক সময় স্টেন্ট নামক একটি তারের জাল বসানো হয়, যা ধমনিকে খোলা রাখতে সাহায্য করে।
এই পদ্ধতি সাধারণত হৃদ্রোগের তীব্রতা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়—যেমন অ্যাংজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, বা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসজনিত ব্লক। এনজিওপ্লাস্টি দ্রুত কার্যকর, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং রোগীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এনজিওপ্লাস্টির পর ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা
এনজিওপ্লাস্টি করানোর পরেও ধমনিতে পুনরায় ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘রেস্টেনোসিস’। এটি ঘটে যখন ধমনির ভেতরে আবার প্লাক জমা হয় বা স্টেন্টের চারপাশে টিস্যু বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেয়ার মেটাল স্টেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ রোগীর মধ্যে রেস্টেনোসিস দেখা যায়। তবে ড্রাগ-এলিউটিং স্টেন্ট ব্যবহারে এই হার কমে ৫-১০ শতাংশে।
কেন ব্লক হয়
১. অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের পুনরাবৃত্তি
রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ধমনিতে আবার প্লাক জমার কারণ হতে পারে।
২. স্টেন্টের চারপাশে টিস্যু বৃদ্ধি
স্টেন্ট বসানোর পর শরীরের প্রতিক্রিয়ায় টিস্যু বৃদ্ধি পায়, যা ধমনিকে আবার সংকীর্ণ করে ফেলতে পারে।
৩. জেনেটিক ও বায়োলজিক্যাল কারণ
কিছু রোগীর শরীর স্টেন্টকে ‘বিদেশী বস্তু’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা ব্লকের কারণ হতে পারে।
৪. জীবনযাত্রার অনিয়ম
খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভাব, মানসিক চাপ এবং ওষুধ না খাওয়ার ফলে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
লক্ষণ
এনজিওপ্লাস্টির পর ব্লক হলে রোগী আবার আগের মতো লক্ষণ অনুভব করতে পারেন:
– বুকে ব্যথা বা চাপ
– শ্বাসকষ্ট
– ক্লান্তি
– ঘাম
– মাথা ঘোরা
– হৃদস্পন্দনের অনিয়ম
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রতিরোধের উপায়
১. ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ
এনজিওপ্লাস্টির পর চিকিৎসক যে ওষুধ দেন—যেমন অ্যান্টিপ্লেটলেট, স্ট্যাটিন, বিটা-ব্লকার—তা নিয়মিত খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
২. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
কম চর্বিযুক্ত, কম লবণযুক্ত, বেশি শাকসবজি ও ফলমূলভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ট্রান্স ফ্যাট ও রেড মিট এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা হালকা ব্যায়াম ধমনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
এগুলো ধমনির ক্ষতি করে এবং ব্লকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সামাজিক যোগাযোগ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৬. নিয়মিত ফলো-আপ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, লিপিড প্রোফাইল ইত্যাদি করানো উচিত।
চিকিৎসা পদ্ধতির অগ্রগতি
বর্তমানে এনজিওপ্লাস্টি প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ড্রাগ-এলিউটিং স্টেন্ট, বায়োঅ্যাবজরবেবল স্টেন্ট, রোটাব্লেটর, ইনট্রাভাসকুলার ইমেজিং ইত্যাদি ব্যবহারে ব্লকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, রোগীর জীবনযাত্রা ও সচেতনতা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।
রোগীর ভূমিকা
রোগীকে অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এনজিওপ্লাস্টি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদক্ষেপ। রোগী যদি ওষুধ না খান, অনিয়মিত জীবনযাপন করেন, তাহলে ব্লক আবার হতে পারে। তাই রোগীর দায়িত্ব হলো:
– চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা
– নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
– খাদ্য ও ব্যায়ামে সচেতনতা
– মানসিক স্থিতি বজায় রাখা
চিকিৎসকের ভূমিকা
চিকিৎসককে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এনজিওপ্লাস্টির পর রোগীকে সঠিক ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং ফলো-আপ সম্পর্কে জানানো জরুরি। পাশাপাশি রোগীর পরিবারকেও সচেতন করা প্রয়োজন।
এনজিওপ্লাস্টি হৃদ্রোগ চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। ব্লক পুনরায় হতে পারে, যদি রোগী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন না আনেন। তাই এনজিওপ্লাস্টির পর জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা, ওষুধ গ্রহণ, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসক ও রোগীর যৌথ প্রচেষ্টায় হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। হৃদ্রোগের চিকিৎসা শুধু হাসপাতালের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি জীবনব্যাপী যাত্রা—যেখানে সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় ওষুধ।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
