

ব্রণ—একটি সাধারণ ত্বকজনিত সমস্যা, যা প্রায় সব বয়সী মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় দেখা দেয়। বিশেষ করে মুখে ব্রণ হলে তা শুধু সৌন্দর্যহানি নয়, অনেক সময় অস্বস্তি, ব্যথা এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেকেই অজান্তেই বা অভ্যাসবশত ব্রণ ফাটিয়ে ফেলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, মুখের একটি নির্দিষ্ট অংশে ব্রণ ফাটানো হতে পারে ভয়ংকর বিপদের কারণ? এমনকি তা পক্ষাঘাত, চোখের সমস্যা, বা প্রাণহানির মতো জটিলতায়ও রূপ নিতে পারে।
এই ফিচারটিতে আমরা অনুসন্ধান করব, মুখের কোন অংশে ব্রণ ফাটানো বিপজ্জনক, কেন তা এমন ভয়ংকর হতে পারে, এবং কীভাবে সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা এই ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
ব্রণ: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ব্রণ বা Acne vulgaris হলো ত্বকের একটি প্রদাহজনিত অবস্থা, যা সাধারণত ত্বকের তেলগ্রন্থি (sebaceous gland) অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করলে এবং মৃত কোষ জমে গিয়ে ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটলে ত্বকে লালচে, ফুলে ওঠা, পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
ব্রণ সাধারণত মুখ, গলা, পিঠ, বুক, কাঁধে দেখা যায়। তবে মুখে ব্রণ হলে তা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান এবং মনোযোগ আকর্ষণ করে। ফলে অনেকেই দ্রুত তা ফাটিয়ে ফেলতে চান।
‘ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল’: মুখের প্রাণঘাতী অঞ্চল
চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুখের একটি বিশেষ অংশকে বলা হয় “ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল” বা “বিপজ্জনক ত্রিভুজ”। এই অঞ্চলটি নাকের দুই পাশ থেকে শুরু হয়ে ঠোঁটের দুই কোণ পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে পড়ে:
– নাকের চারপাশ
– দুই ভ্রুর মাঝখান
– ঠোঁটের উপরের অংশ
এই অংশে থাকা রক্তনালিগুলো সরাসরি মস্তিষ্কের ক্যাভার্নাস সাইনাস নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ শিরার সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে এই অঞ্চলে কোনো সংক্রমণ হলে তা সহজেই মস্তিষ্কে পৌঁছে যেতে পারে।
বিপদের কারণ: সংক্রমণ থেকে পক্ষাঘাত
যখন কেউ এই অঞ্চলের ব্রণ ফাটায়, তখন ত্বকের নিচে থাকা ব্যাকটেরিয়া রক্তনালির মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। এতে দেখা দিতে পারে:
– Cavernous Sinus Thrombosis (CST): এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
– পক্ষাঘাত: সংক্রমণ মস্তিষ্কের স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে দেহের এক বা একাধিক অংশে পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে।
– চোখের সমস্যা : চোখ ফুলে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, এমনকি অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
– মৃত্যু: চিকিৎসা না হলে বা দেরি হলে এই সংক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে।
“ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল”-এ ব্রণ ফাটানো হতে পারে প্রাণঘাতী। তিনি সতর্ক করেন, এই অঞ্চলে রক্তনালির সংযোগ সরাসরি মস্তিষ্কে, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
দুই ভ্রুর মাঝখানের ব্রণ: বিশেষ সতর্কতা*
এই অংশে ব্রণ হলে তা ফাটানো একেবারেই উচিত নয়। কারণ:
– এখানে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু রয়েছে, যা মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত
– সংক্রমণ হলে খিঁচুনি, পক্ষাঘাত, বা স্থায়ী স্নায়ু ক্ষতি হতে পারে
– একাধিক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা সংক্রমণ থেকে বেঁচে গেলেও মস্তিষ্কের একটি অংশ চিরস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
ব্রণ ফাটানোর সাধারণ ঝুঁকি
যদিও সব ব্রণ প্রাণঘাতী নয়, তবুও ব্রণ ফাটানোর কিছু সাধারণ ঝুঁকি রয়েছে:
– ত্বকে স্থায়ী দাগ
– ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার
– নতুন ব্রণের সৃষ্টি
– ত্বকের প্রদাহ বৃদ্ধি
– আত্মবিশ্বাসের হ্রাস
কেন মানুষ ব্রণ ফাটায়?
– অস্বস্তি বা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে
– সৌন্দর্যহানির ভয়
– অভ্যাসবশত
– ব্রণের ভেতরের পুঁজ বের করে ত্বক পরিষ্কার করার ভুল ধারণা
সচেতনতা ও প্রতিকার
১. ব্রণ ফাটানো থেকে বিরত থাকুন
বিশেষ করে মুখের ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল অংশে কখনোই ব্রণ ফাটাবেন না।
২. ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করুন
– গরম পানির ভাপ
– অ্যালোভেরা জেল
– টি ট্রি অয়েল
– তুলসী বা নিমের পেস্ট
৩. চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
যদি ব্রণের সংখ্যা বা আকার বেশি হয়, বা ব্যথা ও ফোলা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
৪. ত্বকের পরিচর্যা করুন
– প্রতিদিন মুখ ধোয়া
– তেলমুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার
– পর্যাপ্ত পানি পান
– স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
৫. মানসিক চাপ কমান
স্ট্রেস হরমোন ব্রণের প্রকোপ বাড়ায়। ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত ঘুম ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
৬. হাত না দেওয়া অভ্যাস করুন
মুখে হাত দেওয়া বা ঘন ঘন স্পর্শ করা ত্বকে জীবাণু ছড়ায় এবং ব্রণ বাড়ায়।
ব্রণ নিয়ে ভুল ধারণা
– “ব্রণ ফাটালে দ্রুত সেরে যায়”—ভুল
– “পুঁজ বের করে দিলে ত্বক পরিষ্কার হয়”—ভুল
– “সব ব্রণই ফাটানো যায়”—ভুল
– “ব্রণ শুধু কিশোরদের হয়”—ভুল
ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভয়ংকর, বিশেষ করে মুখের ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল অংশে। এই অঞ্চলের ব্রণ ফাটানো শুধু ত্বকের ক্ষতি নয়, বরং তা মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে প্রাণঘাতী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সচেতনতা, সঠিক পরিচর্যা, এবং চিকিৎসকের পরামর্শই হতে পারে নিরাপদ পথ।
ব্রণ ফাটানোর সাময়িক স্বস্তি যেন চিরস্থায়ী বিপদের কারণ না হয়—এই বার্তাই আমাদের মনে গেঁথে নিতে হবে।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
