

ঘুম—একটি মৌলিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা আমাদের শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে। কিন্তু যখন এই ঘুমই হয়ে ওঠে দুর্লভ, তখন জীবনের ছন্দে আসে ছন্দপতন। ইনসোমেনিয়া, বাংলায় অনিদ্রা, এমনই এক ঘুমের ব্যাধি যা শুধু রাতের ঘুম কেড়ে নেয় না, দিনের কর্মক্ষমতাও নিঃশেষ করে দেয়। এই ফিচারে আমরা জানব ইনসোমেনিয়া কী, কেন হয়, কী লক্ষণ, এবং কীভাবে প্রতিকার সম্ভব।
ইনসোমেনিয়া (Insomnia) কী?
ইনসোমেনিয়া একটি ঘুমজনিত ব্যাধি বা Sleep Disorder, যেখানে ব্যক্তি ঘুমাতে পারছেন না, ঘুম এলেও তা পর্যাপ্ত নয়, কিংবা ঘুমের গুণগত মান এতটাই খারাপ যে ঘুমের পরও ক্লান্তি কাটে না। এটি হতে পারে ঘুম আসতে দেরি হওয়া, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, কিংবা খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো নানা রূপে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইনসোমেনিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
– প্রাইমারি ইনসোমেনিয়া: যার পেছনে কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক বা মানসিক রোগ নেই।
– সেকেন্ডারি ইনসোমেনিয়া: অন্য কোনো রোগ বা অবস্থার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যেমন বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, হাঁপানি, বাত, ক্যান্সার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি।
ইনসোমেনিয়ার কারণসমূহ
ইনসোমেনিয়ার পেছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ, যা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত প্রভাবের সমন্বয়ে গঠিত।
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: চাকরি হারানো, সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রিয়জনের মৃত্যু, পরীক্ষার ভয়—এসব মানসিক চাপ ঘুমের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।
২. বিষণ্ণতা (Depression): মন খারাপ, আগ্রহহীনতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব—এসব বিষণ্ণতার লক্ষণ ইনসোমেনিয়ার জন্ম দিতে পারে।
৩. অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার: রাতে মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি স্ক্রিনের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণে বাধা দেয়, যা ঘুমের জন্য অপরিহার্য।
৪. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল: চা, কফি, সফট ড্রিংকস, অ্যালকোহল—এসব উত্তেজক পানীয় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৫. মাদকাসক্তি ও ধূমপান: তরুণ সমাজে ইনসোমেনিয়ার অন্যতম কারণ।
৬. শারীরিক অসুস্থতা: হাঁপানি, বাত, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি।
৭. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, অ্যাজমার ইনহেলার, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ইত্যাদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ইনসোমেনিয়ার লক্ষণ
– বিছানায় শুয়ে ঘুম না আসা
– মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া
– খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়া
– ঘুমের পরও ক্লান্তি অনুভব
– মনোযোগে ঘাটতি
– খিটখিটে মেজাজ
– কর্মক্ষমতায় হ্রাস
– মাথাব্যথা, চোখে জ্বালা
– দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব
ইনসোমেনিয়ার প্রভাব
ইনসোমেনিয়া শুধু ঘুমের সমস্যা নয়, এটি ধীরে ধীরে পুরো জীবনকে গ্রাস করে। দীর্ঘমেয়াদি ইনসোমেনিয়া ডিপ্রেশন, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশ, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে ভুল, দুর্ঘটনা, সম্পর্কের টানাপোড়েন—সবকিছুর পেছনে থাকতে পারে অনিদ্রা।
ইনসোমেনিয়ার প্রতিকার
ইনসোমেনিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরন ও কারণের ওপর। চিকিৎসা broadly দুই ভাগে বিভক্ত:
১. সাইকোথেরাপি (Psychotherapy)
– Cognitive Behavioral Therapy for Insomnia (CBT-I): এটি ইনসোমেনিয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। এতে রোগীর ঘুম সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা দূর করা হয়, ঘুমের রুটিন ঠিক করা হয়, এবং ঘুমের পরিবেশ উন্নত করা হয়।
– Relaxation Techniques: ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন ইত্যাদি।
– Sleep Restriction Therapy: ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, যাতে ঘুমের গুণগত মান বাড়ে।
২. ফার্মাকোথেরাপি (Medication)
– ঘুমের ওষুধ (Hypnotics) যেমন জোলপিডেম, এসজোপিক্লোন, রামেলটন ইত্যাদি। তবে এগুলো অল্প সময়ের জন্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত।
– অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ, যদি ইনসোমেনিয়ার পেছনে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ থাকে।
জীবনধারায় পরিবর্তন: ঘুমের অভ্যাস গঠনের ১০টি উপায়
১. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠা
২. ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম কমানো
৩. ঘুমের ঘর অন্ধকার, নিরিবিলি ও ঠান্ডা রাখা
৪. ঘুমের আগে ভারী খাবার, চা-কফি, অ্যালকোহল পরিহার
৫. নিয়মিত ব্যায়াম, তবে সন্ধ্যার পর নয়
৬. বিছানায় শুয়ে চিন্তা না করা
৭. ঘুম না এলে উঠে গিয়ে হালকা বই পড়া বা ধ্যান
৮. দিনের বেলা ঘুমানো কমানো
৯. ঘুমের রুটিনে কঠোর থাকা
১০. প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ইনসোমেনিয়া কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। এটি একটি নীরব ঘাতক, যা ধীরে ধীরে শরীর ও মনকে নিঃশেষ করে দেয়। তবে সচেতনতা, সঠিক অভ্যাস, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই ব্যাধিকে জয় করা সম্ভব। ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটি জীবনের পুনর্জন্ম। তাই ঘুমকে গুরুত্ব দিন, ইনসোমেনিয়াকে বিদায় জানান।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
