পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া হতে পারে যেসব রোগের লক্ষণ

পায়ের তলায় হঠাৎ জ্বালাপোড়া, ঝাঁঝালো অনুভূতি কিংবা সুই ফোটানোর মতো ব্যথা—অনেকেই একে সাময়িক ক্লান্তি বা অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটির ফল মনে করে অবহেলা করেন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই উপসর্গটি হতে পারে একাধিক গুরুতর রোগের পূর্বাভাস। কখনো তা স্নায়ুর ক্ষতি, কখনো ভিটামিনের ঘাটতি, আবার কখনো সংক্রমণ বা হরমোনজনিত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।

এই ফিচারটিতে আমরা অনুসন্ধান করব—পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কেন হয়, এর পেছনে কোন কোন রোগ থাকতে পারে, এবং কখন এটি চিকিৎসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত।

ভিটামিনের ঘাটতি: স্নায়ুর অপুষ্টিতে জ্বালা

শরীরের স্নায়ুতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করতে হলে প্রয়োজন ভিটামিন বি-১২, বি-৫, ডি এবং ই। এই ভিটামিনগুলোর ঘাটতি হলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া, ঝিমঝিম ভাব, অসাড়তা বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব নিউরোপ্যাথির অন্যতম কারণ। ডিম, দুধ, মাছ, বাদাম, সবুজ শাকপাতা ইত্যাদি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব। তবে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতির ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি: নিয়ন্ত্রণহীন রক্তে শর্করার ফল

ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে দীর্ঘদিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে শুরু করে, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পায়ের তলায় জ্বালা, ব্যথা, অসাড়তা, ভারসাম্যহীনতা এবং হাঁটাচলায় সমস্যা। এই অবস্থায় পায়ের নিচে যেন আগুন জ্বলছে এমন অনুভূতি হতে পারে। চিকিৎসা হিসেবে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ুর ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ, এবং নিয়মিত ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফাঙ্গাল সংক্রমণ: আর্দ্রতার ফাঁদে পায়ের তলা

পায়ের তলায় অতিরিক্ত ঘাম, ভেজা মোজা বা অপরিষ্কার জুতা ব্যবহারের ফলে ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে। এই সংক্রমণকে ‘অ্যাথলিটস ফুট’ বলা হয়। এতে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, ফাটা বা লালচে দাগ দেখা দেয়। প্রতিকার হিসেবে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, পাউডার, পরিষ্কার ও শুকনো মোজা ব্যবহার এবং পা নিয়মিত ধুয়ে শুকিয়ে রাখা জরুরি।

রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা: অক্সিজেনের অভাবে জ্বালা

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করা, টাইট জুতা পরা বা সঠিকভাবে চলাফেরা না করার ফলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। এতে পায়ের কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না, ফলে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ও ক্লান্তি দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পা মাঝে মাঝে উঁচু করে রাখা, ভেন্টিলেটেড জুতা ব্যবহার এবং হালকা ম্যাসাজ বা ব্যায়াম কার্যকর হতে পারে।

থাইরয়েড ও কিডনি সমস্যা: হরমোনের ছন্দপতন

থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। হাইপোথাইরয়েডিজমে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া হতে পারে। একইভাবে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরে টক্সিন জমে, যা স্নায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই অবস্থায় পায়ের তলায় জ্বালা, ঝিমঝিম ভাব বা ব্যথা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড ও কিডনি পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।

বার্নিং ফিট সিনড্রোম: অজানা আগুনের ছোঁয়া

কিছু ক্ষেত্রে পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া হয়, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট রোগ ধরা পড়ে না। এই অবস্থাকে বলা হয় বার্নিং ফিট সিনড্রোম। এটি সাধারণত নার্ভের অতিসংবেদনশীলতা বা মানসিক চাপের কারণে হতে পারে। রাতে ঘুমের সময় এই জ্বালাপোড়া বেশি অনুভূত হয়। চিকিৎসা হিসেবে স্নায়ু শান্ত রাখার ওষুধ, মানসিক প্রশান্তি, এবং ঘরোয়া প্রতিকার যেমন ঠাণ্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা কার্যকর হতে পারে।

ঘরোয়া প্রতিকার: সাময়িক আরাম, স্থায়ী সমাধান নয়

পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমাতে অনেকেই ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেন। যেমন—ঠাণ্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা, অ্যালোভেরা জেল লাগানো, নরম জুতা ব্যবহার, পা পরিষ্কার রাখা, হালকা ম্যাসাজ ইত্যাদি। যদিও এসব উপায় সাময়িক আরাম দেয়, তবে যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য উপসর্গ যেমন ফোলা, রঙ পরিবর্তন, ক্ষত বা জ্বর দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?

পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া যদি—
– বারবার বা দীর্ঘ সময় ধরে হয়
– সঙ্গে ঝিমঝিম ভাব, অসাড়তা, ব্যথা বা ভারসাম্যহীনতা থাকে
– ত্বকে ক্ষত, ফাটা বা রঙ পরিবর্তন দেখা দেয়
– জ্বর, ফোলা বা হাঁটাচলায় সমস্যা হয়

তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এই উপসর্গটি হতে পারে এমন কোনো রোগের পূর্বাভাস, যা সময়মতো চিকিৎসা না হলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ উপসর্গ হলেও এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই একে অবহেলা না করে, সময়মতো কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। স্বাস্থ্য সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পায়ের যত্ন—এই চারটি অভ্যাসই হতে পারে সুস্থ পায়ের চাবিকাঠি।

যোগাযোগ

হাকীম মো. মিজানুর রহমান

ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত) 

অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা 

সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ 

 চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা

সততা প্লাজা, 

ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার 

প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন 

রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন

মোবাইল: 01762-240650

সেবাসমূহ :

শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।

শেয়ার করুন: