

পাইলস, যাকে বাংলায় অর্শ বলা হয়, একটি অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক রোগ যা মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে রক্তনালির ফোলাভাবের কারণে সৃষ্টি হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা, রক্তপাত, চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যায় ভোগেন। যদিও পাইলসের চিকিৎসা রয়েছে, তবে রোগ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার রয়েছে যা পাইলসের লক্ষণকে আরও তীব্র করে তোলে, রোগের প্রকোপ বাড়ায় এবং রোগীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই ফিচারটিতে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করব পাইলসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবারগুলো সম্পর্কে, যাতে সচেতনতা বাড়ে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।
১. অতিরিক্ত মশলাদার খাবার: জ্বালাপোড়ার উৎস
মরিচ, আদা, গরম মশলা, সস, আচার, চাটনি—এইসব মশলাদার উপাদান হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং মলদ্বারে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। পাইলসের রোগীদের জন্য এই ধরনের খাবার অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এগুলো মলত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। মশলাদার খাবার রক্তনালিকে উত্তেজিত করে, ফলে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই যতই সুস্বাদু হোক, এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
২. ডুবো তেলে ভাজা খাবার: হজমে বাধা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
পাকোড়া, শিঙাড়া, পরোটা, ফাস্টফুড—এইসব ডিপ ফ্রাইড খাবারে ফাইবারের পরিমাণ কম এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। ফলে হজমে সমস্যা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, যা পাইলসের অন্যতম প্রধান কারণ। ভাজা খাবার মলকে শক্ত করে তোলে, ফলে মলত্যাগের সময় চাপ বাড়ে এবং রক্তনালিতে ক্ষতি হয়। পাইলসের রোগীদের জন্য এই ধরনের খাবার বিষের মতো কাজ করে।
৩. অতিরিক্ত চা ও কফি: পানিশূন্যতা ও হজমের ব্যাঘাত
চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ফলে মল শক্ত হয়ে যায় এবং মলত্যাগে সমস্যা হয়। দিনে এক বা দুই কাপ চা বা কফি গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে পাইলসের সমস্যা বাড়তে পারে। বিশেষ করে চিনি মিশিয়ে চা বা কফি খাওয়া আরও ক্ষতিকর, কারণ অতিরিক্ত চিনি প্রদাহ বাড়ায়।
৪. প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাইবারের অভাব ও হজমে সমস্যা
বিস্কুট, কেক, সফট ড্রিংকস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস—এইসব প্রক্রিয়াজাত খাবারে ফাইবার কম এবং কৃত্রিম উপাদান বেশি থাকে। ফলে হজমে সমস্যা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এই ধরনের খাবার পাইলসের রোগীদের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। এগুলো মলদ্বারে চাপ সৃষ্টি করে এবং রোগের প্রকোপ বাড়ায়।
৫. লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত আমিষ: হজমে কঠিন ও প্রদাহজনক
গরু, খাসি, মুরগির প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, সালামি, বার্গার প্যাটি—এইসব খাবারে ফাইবার নেই এবং হজম করা কঠিন। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এছাড়া এইসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি, যা প্রদাহ বাড়ায় এবং রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৬. অতিরিক্ত লবণ ও চিনি: প্রদাহ ও রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি
অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়ায়, যা রক্তনালির উপর চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত চিনি প্রদাহ বাড়ায় এবং হজমে সমস্যা করে। এই দুই উপাদান পাইলসের লক্ষণকে তীব্র করে তোলে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে।
৭. অ্যালকোহল ও কার্বনেটেড পানীয়: ডিহাইড্রেশন ও হজমের ব্যাঘাত
অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং অন্ত্রের গতি কমিয়ে দেয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কার্বনেটেড পানীয় যেমন কোলা, সোডা—এইসব পানীয় অন্ত্রে গ্যাস তৈরি করে এবং হজমে সমস্যা করে। পাইলসের রোগীদের জন্য এই পানীয়গুলো একেবারেই নিষিদ্ধ।
৮. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ায়
যদিও দুধ অনেকের জন্য পুষ্টিকর, তবে কিছু পাইলস রোগীর ক্ষেত্রে দুধ হজমে সমস্যা করে এবং গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তাদের জন্য দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ক্ষতিকর হতে পারে।
৯. পরিমিত পানি না পান করা: কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ
পাইলসের রোগীদের পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি হজমে সহায়তা করে এবং মলকে নরম রাখে। যারা কম পানি পান করেন, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
১০. ফাইবারবিহীন খাদ্যতালিকা: রোগ নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা
ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখে। যারা খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, ওটস ইত্যাদি রাখেন না, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং পাইলসের লক্ষণ তীব্র হয়। তাই ফাইবারবিহীন খাদ্যতালিকা পাইলস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণই মুক্তির পথ
পাইলস একটি যন্ত্রণাদায়ক রোগ হলেও খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা এনে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উপরে বর্ণিত খাবারগুলো এড়িয়ে চললে রোগের প্রকোপ কমে এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়। পাশাপাশি উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এইসব অভ্যাস গড়ে তুললে পাইলসের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ : শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
