

হার্ট ব্লকেজ, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়, এটি হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনিতে চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ জমে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। এই জমাট বাঁধা পদার্থকে বলা হয় প্লাক, যা ধমনিকে সংকুচিত করে এবং রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না, এবং একসময় তা হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি হঠাৎ করে ঘটে না। শরীর আগেভাগেই কিছু সতর্ক সংকেত পাঠাতে শুরু করে, যা সময়মতো চিনে নিতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
এই ফিচারটিতে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করব হার্ট ব্লকেজের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে, যাতে সচেতনতা বাড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
১. বুকে চাপ, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা (এনজাইনা)
হার্ট ব্লকেজের সবচেয়ে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো বুকে চাপ বা ব্যথা। এটি সাধারণত বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, যেন কেউ ভারী কিছু চাপিয়ে দিয়েছে। অনেক সময় এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, পিঠ বা গলায় ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে এবং শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ বা খাওয়ার পর বাড়তে পারে। বিশ্রামে গেলে ব্যথা কমে যেতে পারে। এই লক্ষণকে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে।
২. সহজেই শ্বাসকষ্ট হওয়া
সিঁড়ি ভাঙা, হালকা হাঁটা বা দৈনন্দিন কাজে হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া হার্ট ব্লকেজের ইঙ্গিত হতে পারে। ব্লকেজ থাকলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অনেক সময় রোগীরা মনে করেন এটি ফুসফুসের সমস্যা, কিন্তু এটি হৃদযন্ত্রের দুর্বলতার লক্ষণও হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
দিনভর ক্লান্ত লাগা, বিশ্রামের পরেও শক্তি না পাওয়া এমন লক্ষণও হার্ট ব্লকেজের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, ফলে দুর্বলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
৪. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
হার্টে রক্ত চলাচলে সমস্যা হলে মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম ভাব বা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এগুলোকে সাধারণ দুর্বলতা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
৫. পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া
হৃদযন্ত্র ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে তরল জমতে থাকে, যার প্রভাব সবচেয়ে আগে পড়ে পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতায়। এগুলো ফুলে উঠতে পারে। এটি হার্ট ফেইলিওরেরও প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় কিডনি বা লিভারের সমস্যার সঙ্গে এই উপসর্গ মিলিয়ে ফেলা হয়, কিন্তু হৃদযন্ত্রের সমস্যাও এর কারণ হতে পারে।
৬. অকারণে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
অনুশীলন না করেও, এমনকি ঠাণ্ডা আবহাওয়াতেও যদি অতিরিক্ত ঘাম হয়, বিশেষ করে বুকে ব্যথার সঙ্গে ঘাম হলে তা হতে পারে হৃদযন্ত্রে চাপ ও ব্লকেজের ইঙ্গিত। এই ধরনের ঘামকে ঠান্ডা ঘাম বলা হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে।
৭. বমি বমি ভাব, বদহজম বা পেটে ব্যথা
অনেক সময় হার্ট ব্লকেজের কারণে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বমি বমি ভাব, অম্বল, বদহজম বা পেটে ব্যথা—এইসব উপসর্গ নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। যদিও এগুলো গ্যাস্ট্রিক বা হজমজনিত সমস্যার মতো মনে হয়, কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের সময়ও এই উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
৮. ঘন ঘন অস্থিরতা বা উদ্বেগ
হার্ট ব্লকেজের কারণে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেক সময় রোগীরা অকারণে উদ্বিগ্ন, অস্থির বা আতঙ্কিত বোধ করেন। এটি মানসিক রোগ নয়, বরং শারীরিক সমস্যার প্রতিফলন হতে পারে।
৯. ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট বা হঠাৎ জেগে ওঠা
রাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হওয়া বা হঠাৎ জেগে ওঠা হার্ট ব্লকেজের লক্ষণ হতে পারে। এটি হার্ট ফেইলিওরের ইঙ্গিতও হতে পারে। অনেক সময় রোগীরা মনে করেন এটি ঘুমের সমস্যা, কিন্তু এটি হৃদযন্ত্রের দুর্বলতার ফলাফল হতে পারে।
১০. অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা বুক ধড়ফড় করা
হৃদযন্ত্রে ব্লকেজ থাকলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। বুক ধড়ফড় করা, হঠাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া—এইসব লক্ষণ হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে যদি এই উপসর্গের সঙ্গে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা থাকে, তাহলে তা আরও গুরুতর হতে পারে।
হার্ট ব্লকেজের কারণসমূহ
– উচ্চ কোলেস্টেরল
– উচ্চ রক্তচাপ
– ধূমপান
– ডায়াবেটিস
– স্থূলতা
– অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
– মানসিক চাপ
– পারিবারিক ইতিহাস
এই কারণগুলো হৃদপিণ্ডে প্লাক জমার ঝুঁকি বাড়ায় এবং ধমনিকে সংকুচিত করে তোলে।
কী করবেন?
এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি যদি বারবার দেখা দেয়, তাহলে তা অবহেলা না করে দ্রুত একজন কার্ডিয়োলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, স্ট্রেস টেস্ট বা এনজিওগ্রাফি করে হার্ট ব্লকেজ শনাক্ত করা সম্ভব। চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু হবে, বিপদ তত কম হবে।
প্রতিরোধের উপায়
– স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
– ফাইবারযুক্ত খাবার খান, চর্বি ও লবণ কমান
– নিয়মিত ব্যায়াম করুন
– ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন
– মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
– নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
হার্ট ব্লকেজ একটি নীরব ঘাতক, যা ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে গড়ে ওঠে। কিন্তু শরীর আগেভাগেই সতর্ক সংকেত পাঠায়। এই সংকেতগুলো চিনে নেওয়া, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাই পারে জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি। সচেতনতা, সতর্কতা ও সময়মতো পদক্ষেপ—এই তিনটি অস্ত্রই পারে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আপনাকে সুস্থ জীবন উপহার দিতে।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ : শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
