টিনিয়া ভার্সিকলার: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

টিনিয়া ভার্সিকলার (Tinea Versicolor) যা পিটিরিয়াসিস ভার্সিকলার নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। এটি ত্বকের রঙে পরিবর্তন ঘটায়, বিশেষ করে ঘাড়, পিঠ, বুক ও বাহুতে হালকা বা গাঢ় ছোপ তৈরি করে। যদিও এটি সংক্রামক নয় এবং সরাসরি ক্ষতিকরও নয়, তবে রোগীর আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে। এই রোগের প্রকৃতি, কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো।

টিনিয়া ভার্সিকলার হলো এক ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন, যা ম্যালাসেজিয়া নামক খামির জাতীয় ছত্রাকের অতিবৃদ্ধির ফলে হয়। এই ছত্রাক স্বাভাবিকভাবে আমাদের ত্বকে থাকে, কিন্তু কিছু পরিবেশগত ও শারীরবৃত্তীয় কারণে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।

রোগের কারণ

টিনিয়া ভার্সিকলারের মূল কারণ হলো ম্যালাসেজিয়া ছত্রাকের অতিবৃদ্ধি। তবে এই অতিবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে এমন কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো:

পরিবেশগত কারণ

– উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া**: গরম ও ঘেমে যাওয়া পরিবেশে ছত্রাক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
– অতিরিক্ত ঘাম**: ঘাম ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
– অপরিষ্কার ত্বক**: নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ছত্রাক জমে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

শারীরবৃত্তীয় কারণ

– হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা বা গর্ভনিরোধক ব্যবহারে হরমোনের ওঠানামা ছত্রাক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
– ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া: যেমন HIV/AIDS, ক্যান্সার চিকিৎসা বা ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ।
– পারিবারিক ইতিহাস: জেনেটিক প্রবণতা থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।

জীবনযাত্রার কারণ

– সিনথেটিক কাপড় পরা: যা ঘাম ধরে রাখে এবং ত্বকে আর্দ্রতা বাড়ায়।
– অতিরিক্ত তেলযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার: যা ছত্রাকের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।

রোগের লক্ষণ

টিনিয়া ভার্সিকলারের লক্ষণগুলো সাধারণত দৃশ্যমান এবং সহজেই শনাক্তযোগ্য:

– ত্বকে হালকা বা গাঢ় ছোপ: সাধারণত গোলাকার বা অনিয়মিত আকৃতির হয়।
– চুলকানি: হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার হতে পারে।
– আঁশযুক্ত ত্বক: কিছু ক্ষেত্রে ছোপের উপর শুষ্ক আঁশ দেখা যায়।
– রঙের পরিবর্তন: ফর্সা ত্বকে গাঢ় ছোপ, আর গাঢ় ত্বকে হালকা ছোপ দেখা যায়।
– বেশি ঘাম হওয়া জায়গায় ছোপ: যেমন ঘাড়, পিঠ, বুক, বাহু, কুঁচকি।

রোগ নির্ণয়

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সাধারণত চোখে দেখে রোগ নির্ণয় করতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে:

– Wood’s Lamp Test: অতিবেগুনি আলোতে সংক্রমিত অংশে সবুজ বা হলুদাভ আলো দেখা যায়।
– Skin Scraping Test: সংক্রমিত ত্বকের নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়।
– KOH Test: ছত্রাক শনাক্ত করতে পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড ব্যবহার করে পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

টিনিয়া ভার্সিকলারের চিকিৎসা সাধারণত সহজ এবং কার্যকর। তবে রোগের মাত্রা ও বিস্তারের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে।

ঔষধ

– অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম: যেমন কেটোকোনাজল, ক্লোট্রিমাজল, টারবিনাফিন।
– অ্যান্টিফাংগাল শ্যাম্পু: যেমন সেলেনিয়াম সালফাইড, জিঙ্ক পাইরিথিয়ন।
-*অ্যান্টিফাংগাল বড়ি: যেমন ফ্লুকোনাজল বা ইট্রাকোনাজল—গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

ঘরোয়া প্রতিকার

– নারকেল তেল: অ্যান্টিফাংগাল গুণ থাকায় সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
– অ্যালোভেরা জেল: ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং সংক্রমণ কমায়।
– দই বা টকদই: প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা ছত্রাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন

– সূতির ঢিলে জামা পরা: ত্বকে বাতাস চলাচল সহজ হয়।
– নিয়মিত স্নান: দিনে অন্তত দুইবার সাবান দিয়ে স্নান করা।
– ত্বক শুকনো রাখা: ঘাম বা আর্দ্রতা যেন না জমে।
– প্রসাধনী ব্যবহারে সতর্কতা: তেলযুক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলা।

রোগ প্রতিরোধ

টিনিয়া ভার্সিকলার প্রতিরোধে কিছু সহজ নিয়ম অনুসরণ করলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব:

– আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ: শরীর শুকনো রাখা এবং ঘাম কমানো।
– পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: নিয়মিত স্নান ও কাপড় পরিষ্কার রাখা।
– সঠিক খাদ্যাভ্যাস: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
– চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: সংক্রমণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।

মানসিক প্রভাব

যদিও টিনিয়া ভার্সিকলার শারীরিকভাবে ক্ষতিকর নয়, তবে এটি রোগীর আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে এটি সামাজিক অস্বস্তি ও আত্ম-সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ।

টিনিয়া ভার্সিকলার একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত চর্মরোগ। এর সঠিক পরিচর্যা, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগটি সংক্রামক নয়, তবে ত্বকের সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।

যোগাযোগ

হাকীম মো. মিজানুর রহমান

ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত) 

অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা 

সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ 

 চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা

সততা প্লাজা, 

ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার 

প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন 

রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন

মোবাইল: 01762-240650

সেবাসমূহ :

শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।

শেয়ার করুন: