

আথ্রাইটিসের (Arthritis) মূল কারণ ও প্রতিকার কি? রোগটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, সামাজিক প্রভাব, এবং প্রতিরোধমূলক ও চিকিৎসাগত দিকগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, এবং বয়সজনিত জটিলতার সঙ্গে সঙ্গে যে রোগটি ক্রমশ সাধারণ হয়ে উঠছে তা হলো আথ্রাইটিস। এটি শুধু একটি রোগ নয়, বরং একাধিক জয়েন্ট-সংক্রান্ত রোগের সমষ্টি, যা শরীরের সংযোগস্থলে ব্যথা, ফোলা, এবং চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে এটি একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।
আথ্রাইটিস কী?
আথ্রাইটিস শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “arthro” (joint) এবং “itis” (inflammation) থেকে। অর্থাৎ, এটি মূলত অস্থিসন্ধির প্রদাহ। এই প্রদাহের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি ব্যথা, জড়তা, ফোলা এবং চলাচলে সীমাবদ্ধতা অনুভব করেন। এটি একক কোনো রোগ নয়, বরং ১০০টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রোগের সমষ্টি, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস।
প্রধান ধরন
– অস্টিওআর্থ্রাইটিস: বয়সজনিত ক্ষয়প্রাপ্তি, অতিরিক্ত ওজন, বা অতিরিক্ত ব্যবহারজনিত কারণে জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে যায়। এটি সাধারণত হাঁটু, কোমর, ঘাড় এবং হাতের আঙুলে হয়।
– রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই জয়েন্টের টিস্যুকে আক্রমণ করে। ফলে প্রদাহ, ব্যথা এবং জয়েন্ট বিকৃতি ঘটে।
– গাউট: রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা জয়েন্টে জমা হয়ে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।
আথ্রাইটিসের মূল কারণ
– বয়স: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
– জেনেটিক্স: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
– অতিরিক্ত ওজন: শরীরের ওজন বেশি হলে হাঁটু ও কোমরের জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
– আঘাত বা ইনজুরি: পূর্বের কোনো জয়েন্ট ইনজুরি ভবিষ্যতে আথ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
– অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে শরীর নিজেই নিজের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
– অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, এবং ব্যায়ামের অভাব।
উপসর্গ
– জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলা
– সকালের সময় জড়তা
– চলাচলে সীমাবদ্ধতা
– ক্লান্তি ও দুর্বলতা
– ত্বকের নিচে গুটি বা নডিউল
– জ্বরজ্বর ভাব (বিশেষ করে রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসে)
প্রতিকার ও চিকিৎসা
আথ্রাইটিসের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরন, তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলো।
১. জীবনযাপন পরিবর্তন
– ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমালে জয়েন্টে চাপ কমে।
– ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম জয়েন্টকে সক্রিয় রাখে।
– সুষম খাদ্য: অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার যেমন মাছ, অলিভ অয়েল, বাদাম, ফলমূল গ্রহণ করা উচিত।
২. ওষুধ
– পেইনকিলার: প্যারাসিটামল বা NSAIDs ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
– স্টেরয়েড: প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
– ডিএমএআরডি: রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসে ব্যবহৃত হয়, যা রোগের অগ্রগতি কমায়।
৩. ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায়। এটি ব্যথা কমায় এবং চলাচল সহজ করে।
৪. সার্জারি
যখন অন্যান্য চিকিৎসা ব্যর্থ হয়, তখন জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট বা আর্থ্রোস্কোপি করা হয়। হাঁটু বা কোমরের জয়েন্ট প্রতিস্থাপন বর্তমানে অনেক সফলতা পেয়েছে।
৫. প্রাকৃতিক ও বিকল্প চিকিৎসা
– আয়ুর্বেদ ও ইউনানি: কিছু ভেষজ উপাদান যেমন হরিতকি, গুড়ুচি, এবং গন্ধক ব্যবহার করা হয়।
– আকুপাংচার: ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
– হট ও কোল্ড থেরাপি: ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিরোধ
– নিয়মিত ব্যায়াম
– সুষম খাদ্য গ্রহণ
– ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
– পর্যাপ্ত বিশ্রাম
– মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
আথ্রাইটিস শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, চলাচলের সীমাবদ্ধতা, কর্মক্ষমতা হ্রাস, এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব রোগীকে হতাশায় ফেলতে পারে। তাই পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি এবং মানসিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আথ্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সঠিক জীবনযাপন, সময়মতো চিকিৎসা, এবং মানসিক দৃঢ়তা থাকলে একজন রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
