কৃত্রিম চিনি যেভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়

ডায়াবেটিস রোগীসহ অনেক স্বাস্থ্য সচেতনরাই বর্তমানে চিনির বিকল্প হিসেবে আর্টিফিসিয়াল সুইটনার বা কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করেন। বিশেষ করে চায়ের সঙ্গেই বেশি মেশানো হয় এই কৃত্রিম চিনি। তবে এটি কতটা স্বাস্থ্যকর, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুগার ফ্রি, স্টিভিয়া’সহ বাজারে যে সব কৃত্রিম চিনি পাওয়া যায়, তাতে অ্যাসপারটেম ও সুক্রালোজ নামক যৌগ থাকে। এর কারণেই মিষ্টি ভাব আসে। যা শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়।

সুক্রালোজের তুলনায় অ্যাসপারটেম আরও বেশি ক্ষতিকর। এই দুই যৌগ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শরীরে নেগেটিভ ইলেকট্রন তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

‘দ্য বিএমজে’ দ্বারা প্রকাশিত ফরাসি প্রাপ্তবয়স্কদের একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চতর কৃত্রিম সুইটনার সেবন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকসহ কার্ডিওভাসকুলার বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

বেশ কিছু গবেষণায় ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রদাহের সঙ্গে কৃত্রিম মিষ্টিজাতীয় পানীয় বা কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত পানীয় পানের যোগসূত্রতা খুঁজে পাওয়া গেছে।

ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ (ইনসারম) এর গবেষকদের একটি দল ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৮ জন অংশগ্রহণকারীদের (গড় বয়স ৪২ বছর; ৮০ শতাংশ নারী) তথ্য সংগ্রহ করেন।

তাদের ২৪ ঘণ্টার খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম মিষ্টির ব্যবহার রেকর্ড করে তা মূল্যায়ন করেন গবেষকরা। স্বাস্থ্য, জীবনধারা ও সামাজিক জনসংখ্যাগত বিষয়গুলোর রেকর্ডও যাচাই করা হয়।

দেখা যায়, মোট ৩৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারীরা কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণ করেছেন, যার গড় ৪২.৪৬ মিলিগ্রাম/দিন গ্রহণ করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা কৃত্রিম সুইটনার গ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে ধূমপান, শারীরিকভাবে কম সক্রিয় ও ওজন কমানোর ডায়েট অনুসরণের প্রবণতা বেশি ছিল।

২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ ৯ বছরের প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৫০২টি কার্ডিওভাসকুলারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আছে হার্ট অ্যাটাক, এনজিনা, এনজিওপ্লাস্টি (অবরুদ্ধ বা সরু ধমনীকে হার্টে প্রশস্ত করার একটি পদ্ধতি), ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণ এমনকি স্ট্রোক।

গবেষকরা দেখেছেন, কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়া কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে অনেবটাই যুক্ত। কৃত্রিম সুইটনার সেরিব্রোভাসকুলার রোগেরও ঝুঁকি বাড়ায়।

তাহলে ঠিক কতটুকু খাবেন কৃত্রিম চিনি? এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, কৃত্রিম চিনি কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে কোন সংস্থার চিনিতে অ্যাসপারটেমের মাত্রা কম আছে।

যদি পাউডার ধরনের কৃত্রিম চিনি খান, তাহলে দিনে আধা চামচের বেশি খাওয়া কখনো উচিত নয়। যাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এ ধরনের চিনি না খাওয়াই ভাল। ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রেও কৃত্রিম চিনি গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

সূত্র: নিউজ মেডিকেল.নেট

শেয়ার করুন: